পদ্মা সেতু | রচনা বা প্রবন্ধ

পদ্মা সেতু পদ্মা নদীর উপর নির্মিত বাংলাদেশের দীর্ঘতম ও বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। সেতুটি ঢাকা বিভাগের দুই জেলা অর্থাৎ মুন্সিগঞ্জ জেলার মাওয়া ও লৌহজংকে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। সর্ববৃহৎ এই সেতু নির্মাণের ফলে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯টি জেলা যুক্ত হয়েছে।

পদ্মা সেতু রচনা বা প্রবন্ধ

স্বপ্নের পদ্মা সেতু রচনার আলোচ্য বিষয় হিসেবে থাকছে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন, পদ্মা সেতুর বর্ণনা, পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয়, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব, দারিদ্র বিমোচনের পদ্মা সেতুর গুরুত্ কৃষিক্ষেত্রে পদ্মা সেতুর গুরুত্ব, শিল্পক্ষেত্রে পদ্মা সেতুর গুরুত্ব ও এধরনের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে।

পেজ সূচীপত্র

পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রেক্ষাপট 

নদীমাতৃক বাংলাদেশের ভিতরে রয়েছে অসংখ্য নদ-নদী। যার ফলে এদেশের মানুষের চলাচলে প্রতিনিয়তই নদীপথের সাহায্য নিতে হয়। নদীপথে চলতে গিয়ে তৈরি হয় গতি মন্থরতা ও দীর্ঘ সূত্রীতা। এই  চলাচলকে গতিশীল করার জন্য প্রয়োজন হয় নদীর উপর সেতু নির্মাণের।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পদ্মা নদী পারাপারে মানুষের দুঃখ-কষ্ট ও দুর্ভোগ ছিল অসীম। বাংলাদেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি ছিল পদ্মা নদীর উপর সেতু নির্মাণের জন্য। পদ্মা সেতুর সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করে ১৯৯৮ সালে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল।

বিভিন্ন সমীক্ষা যাচাইয়ের পর ২০০১ সালে পদ্মা সেতুর ভিত্তি বস্তুর স্থাপন করা হলেও অর্থায়নের সুযোগ সৃষ্টি না হওয়ায় সেতু নির্মাণের কাজ স্থগিত হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে ২০০৯ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের তৎপরতা আবার শুরু হয়।

আরও পড়ুন ঃ গরু : রচনা বা প্রবন্ধ।

পদ্মা সেতুর বর্ণনা

নদীমাতৃক বাংলাদেশে দীর্ঘতম সেতুই হলো পদ্মা সেতু। এই সেতুর দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার (৩.৮২ মাইল) এবং প্রস্থ  ২১.৯০ মিটার (৭২ ফুট)। দুই স্তর বিশিষ্ট এই সেতুর উপর দিয়ে চলবে যানবাহন এবং নিচের স্তরে চলবে ট্রেন। 

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর মূল সেতুর পিলার ৪২টি তার ভিতর নদীর মধ্যে রয়েছে ৪০টি ও নদীর দুইপাশে রয়েছে ২টি পিলার। নদীর ভিতরের ৪০টি পিলারে ৬টি করে মোট ২৪০টি পাইল রয়েছে। এছাড়াও সংযোগ সেতুর দুই পাশে ২টি পিলারে ১২টি করে মোট ২৪টি পাইল রয়েছে। পিলারের উপরে ৪১ টি স্প্যান বসানো আছে।

আরও পড়ুন ঃ ছাত্র জীবনে সফল হওয়ার উপায়

স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলাচলের জন্য উভয় পার্শ্বে ১৪টি নতুন রেলওয়ে স্টেশন স্থাপন ও ৬টি বিদ্যমান রেলওয়ে স্টেশন উন্নয়ন করা হয়েছে। স্টেশনগুলো হলো

১৪টি নতুন স্টেশন ঃ কেরানীগঞ্জ, নিমতলা, শ্রীনগর, মাওয়া, জাজিরা, শিবচর, ভাঙ্গা জংশন, নগরকান্দা, মুকসুদপুর, মহেশপুর, লোহাগড়া, নড়াইল, জামদিয়া ও পদ্মবিল। এছাড়াও অবকাঠামো উন্নয়নের ৬টি স্টেশন হলো ঢাকা, গেন্ডারিয়া,ভাঙ্গা, কাশিয়ানী, রূপদিয়া ও সিঙ্গিয়া।

১০০ বছর স্থায়িত্বের এই সেতুটি নির্মিত হয়েছে কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে। নদী শাসনের কাজ করেছে চীনের সিনহাইড্রো কর্পোরেশন। সেতুটির দুই পাশের সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ করেছে বাংলাদেশের আব্দুল মোমিন লিমিটেড। এই পদ্মা সেতুর মূল সেতুর কাজ কয়েছে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। এই স্বপ্নের পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ পুরোপুরি তদারকি করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বুয়েট এবং কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে কর্পোরেশন এন্ড অ্যাসোসিয়েটস।

পদ্মা সেতু নির্মাণের ব্যয়

পদ্মা সেতু প্রকল্প বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থাৎ পদ্মা সেতু নির্মাণে দফায় দফায় এর নির্মান ব্যয় বাড়ানো হয়েছিল। পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রথমে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০,২৬২ কোটি টাকা। পরবর্তীতে ২০১১ সালে নির্মাণ ব্যয় ২০,৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকায় উন্নীত করে একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১৬ সালে আবারও নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি করে ধরা হয় ৮,২৮৬ কোটি টাকা। পরবর্তীতে সর্বশেষে আরও ১,৪০০ কোটি টাকা বেড়ে মোট সেতুটির নির্মাণ ব্যয় দাঁড়ায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা, যার পরিমাণ ৩.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমান।

আরও পড়ুন ঃ ৫৫০+ বাংলা বাগধারা।

পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন

পদ্মা সেতু নির্মাণ শেষে ২০২২ সালের ২৫শে জুন একটি জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন করেন তৎকালীন সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ২৬ নভেম্বর ২০১৪ সালে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য সারা বাংলাদেশের সকল গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোকে আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয় এবং সন্ধ্যার পরে আতশবাজির মধ্য দিয়ে এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখা হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশি সকল অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য বিমান থেকে ছাড়া হয় রঙ্গিন ধোঁয়া (বাষ্প), হেলিকপ্টার থেকে উড়ানো হয় রং-বেরঙের জরি। সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ছিল বিমান, হেলিকপ্টার ও মিগ-২৯ জঙ্গি বিমানের দৃষ্টি নন্দিত প্রদর্শনী।

আরও পড়ুন ঃ ২১০+ গ্রাম বাংলার প্রবাদ প্রবচন ও উক্তি।

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি

পদ্মা সেতু নির্মিত হওয়ার ফলে ফেরি পারাপারের জন্য পাটুরিয়া, দৌলোদিয়া, মাওয়া ও জাজিরা ঘাটে বাস-ট্রাক পারাপার জন্য আর ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে অল্প সময়ে মানুষ ও মালামাল বহনকারী বাস-ট্রাকগুলো যেতে পারবে। এতে করে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার সাথে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগ ত্বরান্বিত হবে। পদ্মা সেতু নির্মাণের কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেতে সময় ও খরচ কম লাগবে।

আরও পড়ুন ঃ ১৫১০+ এক কথায় প্রকাশ বা বাক্য সংকোচন।

পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব

পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনেক! পদ্মা সেতু নির্মিত হওয়ার কারণে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনগণের ভাগ্য বদলাতে সহায়তা করবে। পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে উৎপাদিত বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য ও শাকসবজি সহ অন্যান্য পন্য স্বল্প খরচে অল্প সময়ে রাজধানী ঢাকা বাসীর চাহিদার যোগান দিতে সক্ষম হবে। ফলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে ও দ্রুতহারে দেশের জিডিপি বৃদ্ধি পাবে।

কৃষি ক্ষেত্রে পদ্মা সেতুর গুরুত্ব

পদ্মা সেতু নির্মিত হওয়ার আগে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে উৎপাদিত কৃষি পণ্যগুলো দ্রুতার সহিত দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নিতে বিলম্ব হতো, ফলে অনেক কৃষি পন্য নষ্ট হয়ে যেত বিদায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হতো। বর্তমান সময়ে পদ্মা সেতু নির্মিত হওয়ার ফলে ঐ অঞ্চলে উৎপাদিত কৃষি পণ্যগুলো দ্রুততার সহিত রাজধানী ঢাকা সহ অন্যান্য অঞ্চলে নিতে পারেন। এতে করে  কৃষকদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে। ফলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হচ্ছে ও জিডিপি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

উপসংহার

বাংলাদেশের একটি অভূতপূর্ব অর্জনের নাম 'পদ্মা সেতু'। পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে কৃষি উন্নয়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিল্প ও বাণিজ্য উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে। পদ্মা সেতু সারা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মানকে উন্নত করেছে। পদ্মা সেতু নির্মিত হওয়ার ফলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ বেড়েছে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জিডিপি।

আশা করি, আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা পদ্মা সেতু সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানতে পেরেছেন ও উপকৃত হয়েছেন। পদ্মা সেতু সম্পর্কিত আজকের আর্টিকেলটি প্রবন্ধ বা রচনা আকারে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা ছাত্র-ছাত্রীদের উপকারে আসবে বলে আমি মনে করি। এ ধরনের আরও আপডেট তথ্য পাওয়ার জন্য চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে আমাদের সাথেই থাকুন আর আর্টিকেলটি শেয়ার করে দিন যেন অন্যান্য পাঠক বন্ধুরাও এ তথ্যগুলো জানতে পারেন। আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

aksgreenit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url