শীতকাল | রচনা বা প্রবন্ধ
ভূমিকা
ছয় ঋতুর বাংলাদেশে পৌষ ও মাঘ এই দুই মাস মিলে শীতকাল। শীতকাল হলো বছরের সবচেয়ে ঠান্ডা ঋতু। নভেম্বর মাসে শীত শুরু হয়ে ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত থাকে। অনেক সময় সারাদিন ঠান্ডা বাতাস এবং মৃদু হাওয়া বইতে থাকে। এই শীতকালে দিন ছোট এবং রাত বড় হয়ে থাকে। শীতকালে বৃষ্টি হয় না বরং রাতে শিশির পড়ে।
শীতকালে সকাল বেলা ঘাসের ডগায় জমে থাকা শিশির বিন্দু মুক্তার মতো ঝলমল করে। শীতের দিনে অনেক সময় রোদের দেখা মেলে না। রোদের দিনগুলোতে শীত কম থাকে ফলে আরাম লাগে। এই সময় প্রায় গাছ থেকে পাতা ঝরে পড়ে যায়। শীতকাল অনেকেরই পছন্দের আবার কারও কারও অপছন্দের।
পেজ সূচীপত্র
শীতকালের প্রকৃতি
শীতকাল নদীমাতৃক ও সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা বাংলাদেশের রূপ প্রকৃতিকে এক অন্য রূপে সাজিয়ে তুলে। শীতের সকালে কুয়াশার চাদরে মাঠ-ঘাট ঢেকে যায়। শীতকালের অন্যতম সৌন্দর্য শিশির ভেজা ঘাস। নদী, খাল, বিল ও সমুদ্রের পানি শান্ত থাকে। ঘাস ও গাছপালার পাতায় শিশিরের ফোটা মুক্তার মত ঝকঝক করে যা প্রকৃতিক সৌন্দর্য্যকে আরো বাড়িয়ে দেয়। শীতকালের শেষ প্রান্তে অনেক গাছের পাতা ঝরে যায় এবং নতুন পাতা বের হয়। শীতকালে বিভিন্ন ধরনের অতিথি পাখিরা এসে ভিড় জমায় আমাদের বাংলাদেশে। শীতকালে ডালিয়া, সূর্যমুখী, গোলাপ, গাদা, চন্দ্রমল্লিকা, সরিষা ফুল ফোটে যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও সৌন্দর্য্য মন্ডিত করে তুলে।
আরও পড়ুন ঃ পদ্মা সেতু রচনা বা প্রবন্ধ।
শীতকাল ও খাদ্যাভ্যাস
শীতকালে খাদ্যাভ্যাস ব্যপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এসময় বাজারে অনেক রকমের শাকসবজি ও ফল-মূল পাওয়া যায়। শীতের শাকসবজি বিশেষ করে বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, গাজর, খিরা, শিম, বেগুন, মুলা, মটরশুটি, শালগম, ইত্যাদি খাবারে খাবারে বৈচিত্র আনে। অনেক ধরনের শাকও পাওয়া যায় এই শীতে যেমন - লাল শাক, বথুয়া শাক, মুলা শাক, পালং শাক, খেসাড়ী শাক, সরিষা শাক ইত্যাদি। শীতের সময় আপেল, আঙ্গুর, বেদেনা, কমলা, সফেদা, আমলকি, বরই, জলপাই, পানিফল ইত্যাদি বেশি পরিমাণে উৎপাদন হয়। গ্রাম কিংবা শহরে সব জায়গাতেই খেজুরের রস-মুড়ি ও খেজুর রসের পিঠাপুলি শীতকালে বিশেষ খাবার হিসেবে প্রাধান্য পায়।
আরও পড়ুন ঃ ছাত্র জীবনে সফল হওয়ার উপায়।
শীতকাল ও জীবনযাত্রা
শীতকালে জীবনযাত্রায় বিভিন্ন রকম বৈচিত্র লক্ষ্য করা যায়। শীতের সকালে ছোট ছেলে-মেয়েরা গরম কাপড় পড়ে কুয়াশার মধ্যে খেলাধুলা করেে এ এক অন্যরকম আনন্দ। শীতের মধ্যে গ্রাম অঞ্চলে কৃষকরা কুয়াশা ঘন সকালে কৃষি জমিতে কাজ করেন। ফলে শীতের সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পায়। শীতকালে গ্রামীণ জীবনে শীত নিবারণের জন্য গরম কাপড় পরিধানের পাশাপাশি কোথাও কোথাও আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের আপ্রাণ চেষ্টা চলে। শহর জীবনে শীতের সকাল কিছুটা ভিন্ন হয়ে থাকে। শহরে শীতের সময় চায়ের দোকানে আড্ডা বসে। বিত্তবানদের উচিত শীতকালে অসহায় দুঃস্থ জনগণকে শীত নিবারণের সহায়তা করা।
আরও পড়ুন ঃ গরু রচনা বা প্রবন্ধ।
শীতকাল ও কৃষি
শীতকালের শীতল আবহাওয়ায় কিছু কিছু কৃষি ফসলের খুব ভালো ফলন হয়, বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি। এই শীতের মৌসুমে পাতাকপি, ফুলকপি, গাজর, মুলা, মটরশুটি, আলু এই ধরনের ফসলের উৎপাদন বেশি হয়। কোন কোন সময় শৈত্যপ্রবাহের কারণে অতি কুয়াশার কারণে এ ধরনের ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হয়ে থাকে। শীতকালে নতুন ধানের চালের আটা আর খেজুরের গুড দিয়ে হরেক রকমের পিঠা বানিয়ে খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। শীতকালে সকাল-সন্ধ্যা বাসায়, দোকানে এবং রাস্তার পাশে অনেকেই অনেক ধরনের পিঠা বানিয়ে বিক্রি করেন। শীতকালে পিঠা উৎসবে কৃষকদের মনে যেমন আনন্দ থাকে তেমনি থাকে সবজি বিক্রির মাধ্যমে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা।
আরও পড়ুন ঃ ৫৫০+ বাংলা বাগধারা।
শীতকাল ও সাংস্কৃতিক উৎসব
শীতকাল আমাদের দেশে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উৎসবের মোক্ষণ সময়। শীতকালে বাড়িতে বাড়িতে খেজুর রসের পিঠাপুলি খাওয়ার ধুম পড়ে যায়, সাথে থাকে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উৎসব। শীতকালে গাছিরা শীতের সকালে কুয়াশাচ্ছন্ন ভরে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে। সে রস-গুড় দিয়েই অনেক ধরনের পিঠাপুলি, ক্ষীর-পাইস তৈরি করা হয়। শীতকালে শহর অঞ্চলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। তাছাড়াও শীতকালে আমাদের বিজয় দিবসের সংস্কৃতি অনুষ্ঠান ও খৃষ্টান সম্প্রদায়ের বড়দিনের উৎসব পালিত হয়।
আরও পড়ুন ঃ ২১০+ প্রবাদ প্রবচন বা মনীষীদের উক্তি।
শীতকাল ও পর্যটন
শীতকালে পর্যটকদের জন্য অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করে। শীতকালে ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কা থাকে না, ফলে সাগর শান্ত থাকে। এতে করে পর্যটকরা নির্বিঘ্নে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, সিলেত, জাফলং, শ্রীমঙ্গল, সুন্দরবন এরকম বিভিন্ন পর্যটন এলাকাতে ভ্রমণ করতে পারেন। শীতকালে সমুদ্র সৈকতের ইনজয় ও নৌকা ভ্রমণ করা খুবই ভালো লাগে। এক কথা বলা যায় শীতকাল পর্যটকদের মৌসুম। শীতকালে বিভিন্ন দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকরা বাংলাদেশের বিভিন্ন ট্যুরিং স্পট দেখার জন্য চলে আসেন।
আরও পড়ুন ঃ ১৫০০+ এক কথায় প্রকাশ বা বাক্য সংকোচন।
শীতকাল ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি
শীতকালে শীত হবে এটাই স্বাভাবিক ঘটনা। তবে সহনীয় মাত্রার শীত সবার জন্যই ভালো। কোন কোন সময় অসহনীয় শীত পড়ে, তাপমাত্রা কমে যায়। এতে করে সবারই অসুবিধা হয়। বিশেষ করে শিশু ও বয়োবৃদ্ধ লোকজন বেশি পরিমাণে অসুবিধার মধ্যে পড়ে যান। শীতকালে অধিক কুয়াশা ও তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণে নানান ধরনের অসুখ-বিসুখ বিশেষ করে সর্দি, হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন ধরনের ঠান্ডা জনিত রোগগুলোর ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই রোগগুলো থেকে শীতকালে বাঁচার জন্য সকলকে বিশেষ সতর্কতা ও গরম কাপড়-চোপড় পরিধান করতে হয়।
শীতকালের সমস্যা
শীতকালে সহনীয় মাত্রায় শীত থাকলে সবারই ভালো লাগে। যদি অসহনীয় মাত্রা শীত পড়ে ও তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কমে যায় তাহলে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সকলেই শীতে কষ্ট অনুভব করেন এবং বিভিন্ন সমস্যার ভুগতে থাকেন। শীতের প্রকোপ বেড়ে গেলে ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়। খেটে খাওয়া মানুষজন ঠিকমতো কাজ করতে পারেন না বিধায় তাদের সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয়। শীতে তাপমাত্রা কমে গেলে কৃষি কাজে কৃষকরা মনোযোগী হতে পারেন না ফলে কৃষি উৎপাদনও কমে যেতে পারে। বিশেষ করে শীতের মধ্যে কাদা-পানির মধ্যে ইরি ধান লাগাতে গিয়ে অনেক কৃষক ভাইয়েরা শীতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই সবাইকে সচেতন থেকে শীতের সময় গরম কাপড় পরিধান করে শীত নিবারণে সচেতন থাকতে হবে।
উপসংহার
শীতকাল অনেক মজার একটি ঋতু ছয়। ষড়ঋতুর বাংলাদেশে শীতকালে নবান্ন থেকে শুরু করে সব ধরনের আনন্দ উৎসবে অনেক মজা হয়। শীতকালে খাওয়া-দাওয়ায় অনন্য মাত্রা যোগ হয়। অপর দিকে শীতের প্রকোপ বেড়ে গেলে সমাজের সকল শ্রেণী পেশার মানুষের জীবন যাত্রায় বিভিন্ন সমস্যা বাড়তে থাকে। সুতরাং শীতকালে বিভিন্ন আনন্দ উৎসয়ের পাশাপাশি নিজেকে সচেতন থাকতে হবে যেন কোন ধরনের অসুখ-বিসুখে পড়তে না হয়। নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হন, শীতকালে রোগ মুক্ত থেকে শীত উপভোগ করুন।

aksgreenit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url