সেকেন্ড হ্যান্ড আইফোন কেনার সময় যেগুলো যাচাই করা জরুরী
সেকেন্ড হ্যান্ড আইফোন কেনার সময় যেগুলো যাচাই করা জরুরী সে বিষয়গুলো সম্পর্কে জানানোর জন্যই আজকের আর্টিকেলটি লেখা। বর্তমান সময়ে স্মার্টফোন ছাড়া স্ট্যান্ডার্ড লাইক লিড করা প্রায় অসম্ভব। সেজন্য সবাই চেষ্টা করেন একটি আইফোন বা স্মার্টফোন কেনার জন্য। সকলে এটাও জানেন যে স্মার্টফোনের চেয়ে আইফোনের দাম অনেক বেশী। তারপরেও আইফোন কেনার আগ্রহ সবার মধ্যে। আইফোনের দাম বেশি হওয়ার কারণেই সেকেন্ড হ্যান্ড বা পুরাতন আইফোন কেনার জন্য অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করে থাকেন।
পুরাতন আইফোন কেনার সময় কিছু বিষয় ভালো করে যাচাই-বাছাই করা জরুরি। আজকের আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা জানতে পারবেন আইফোন কেনার সময় এর অপারেটিং সিস্টেম, ব্যাটারি ব্যাকআপ, স্টোরেজ ক্যাপাসিটি, সেটটির ডিসপ্লে অরিজিনাল কিনা এ ধরনের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে।
পেজ সুচিপত্র
সেকেন্ড হ্যান্ড আইফোন কেনার সময় যেগুলো যাচাই করা জরুরী
সেকেন্ড হ্যান্ড আইফোন কেনার সময় ফোনের বিভিন্ন বিষয়গুলো ভালোভাবে যাচাই বাছাই করে তারপরে একটা iphone কেনা উচিত। এক গবেষণায় দেখা গেছে পুরাতন মোবাইল বেঁচা কেনার ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ বাজার আইফোনের দখলে। সেখানে কারণ হিসেবে বলা হয়েছে আইফোনের ক্যামেরা, নিরাপত্তা, গতি ও পারফরম্যান্স দিয়ে কোন কোন নতুন ফোনের চেয়ে আরো ভালো পারফর্ম করা যায়। আবার কেনার সময় কোন কোন ক্ষেত্রে ওয়ারেন্টি ও ফিনান্সিয়াল বেনিফিটও পাওয়া যায়। বন্ধুরা চলুন আর দেরি না করে পুরাতন আইফোন কেনার সময় যে বিষয়গুলো ভালো মতো যাচাই করা জরুরী সেগুলো জেনে নেওয়া যাক।
আসল মালিকানা ও চুরিকৃত ফোন যাচাই
সেকেন্ড হ্যান্ড আইফোন কেনার সময় যে বিষয়গুলো যাচাই করা জরুরী তার মধ্যে অন্যতম একটি বিষয় হলো আইফোনের আসল মালিকানা যাচাই করা। অর্থাৎ আপনি যার কাছে আইফোন কিনবেন সে ব্যক্তি আইফোনে আসল মালিক কিনা। অনেক সময় চুরি হয়ে যাওয়া আইফোন কম দামে বিক্রি করে দেয় এতে করে ঐ ফোন কিনে পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন আইনে জটিলতায় পড়তে হয়।
আরও পড়ুন ঃ অ্যাপেলের ১০ টি সেরা আইফোন মডেল সম্পর্কে জেনে নিন।
ফোনের মালিকানা চেক করার জন্য প্রথমে ফোনের সেটিংস (Settings) থেকে জেনারেল (General) সেকশনে গিয়ে এবাউট (About) সেকশনের নিচের দিক আইএমইআই (IMEI) কোডটি খুঁজে বের করে মনে রাখার জন্য লিখে রাখুন। এই কোডটি সাধারণত ১৫ ডিজিটের হয়ে থাক। CTIA Stolen Phone Checker সাইটে প্রবেশ করে ফোনের আইএমইআই কোডটি লিখে প্রেস করুন।
ফোনটি যদি বৈধ মালিকের হয় তাহলে গ্রিন নোটিশ আসবে আর যদি চুরি করা ফোন হয় তাহলে সেখানে রেড নোটিশ দেখতে পাবেন। এভাবেই iphone এর আসল মালিকানা সম্পর্কে আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন। এছাড়াও চুরি হওয়া বা হারিয়ে যাওয়া ফোনগুলোতে আইটিন ব্যবহার করে লক করে দেওয়া হয়। কোন ফোনে এ ধরনের সমস্যা থাকলে সহজেই বুঝে নিতে পারেন এই ফোনটি চুরি করা।
বিক্রেতা বিশ্বস্ত কি না?
সেকেন্ড হ্যান্ড আইফোন কেনার সময় যে বিষয়গুলো যাচাই করা জরুরী এর অন্যতম একটি হলো বিক্রেতা বিশ্বস্ত কিনা সেটি যাচাই করা। ইলেকট্রিক্যাল জিনিসের ক্ষেত্রে বিশ্বস্ততা মেইন বিষয়। আপনারা অনেকেই অনলাইন থেকে জিনিসপত্র কিনে ঠকেন আবার অনেকেই জিতেন।কিন্তু ফোন এমন একটা জিনিস যা কেনার সময় অবশ্যই একজন স্বনামধন্য ও বিশ্বস্ত বিক্রেতার কাছে থেকে সেকেন্ড হ্যান্ড iphone কিনলেও যেকোনো ত্রুটি দেখা দিলে আপনি সেরে নিতে পারবেন সেজন্য পুরাতন জিনিসের ক্ষেত্রে টাকা নয় বিশ্বস্তাততা ও ভালো পণ্যই আসল বিষয়।
আরও পড়ুন ঃ ২ মিনিটে অনলাইনে ১৭ ডিজিটের জন্ম নিবন্ধন যাচাই করবেন যেভাবে।
সিম সাপোর্ট যাচাই করুন
সেকেন্ড হ্যান্ড আইফোন কেনার সময় অবশ্যই এর সিম সাপোর্টিং ব্যবস্থাটা ভালো করে দেখে নিতে হবে। অনেক সময় iphone এর অভ্যন্তরীণ ড্যামেজ কিংবা সফটওয়্যার ব্যাগ এর কারণে আইফোনের সিম কাজ করে না। কোন কোন ক্ষেত্রে আই ফোনে লক থাকে এবং বাইপাস পদ্ধতি ব্যবহার করেও সিম ব্যবহার করা যায়।
অনেক সময় সিম ছাড়া আইফোন ব্যবহার করা গেলেও সিম কার্ড সাপোর্ট করে না। তাই ব্যবহৃত পুরাতন আইফোন কেনার আগে এটি সিয়র হতে হবে, যে ফোনটি আপনি কিনতে যাচ্ছেন সেটিতে সিম ঠিকমতো কাজ করছে কিনা।
গ্রেডিং সিস্টেম যাচাই করুন
যিনারা সেকেন্ড হ্যান্ড iphone বিক্রি করেন তিনারা ফোন হাতে পাওয়ার সাথে সাথেই ফোনটির সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে ফোনগুলো কে এ গ্রেড, বি গ্রেড ও সি গ্রেডে ভাগ করেন। সাধারণভাবেই বলা যায় এ গ্রেড এর ফোনগুলোরলোর অবস্থা তুলনামূলকভাবে ভালো থাকে। এই গ্রেডিং সিস্টেমের মাধ্যমে বিক্রেতারা আইফোনের ব্যবহারের উপর নির্ভর করে এক বাহ্যিক ক্ষয়ক্ষতি ও বাহ্যিক অবস্থা ভালো এনজয় করেন। আঈফোন কেনার আগে এগুলো ভালো ভাবে দেখে নিন।
আরও পড়ুন ঃ শিশুদের মোবাইল ফোন আসক্তি কমানোর ১৫ টি উপায় জেনে নিন।
ডিসপ্লে যাচাই করুন
পুরাতন আইফোন কেনার সময় অবশ্যই এর ডিসপ্লে যাচাই করে নিন। ভালো করে যাচাই করুন ডিসপ্লে অরিজিনাল নাকি পরে লাগানো ডুপ্লিকেট। আইফোনের ডিসপ্লে যাচাই করার জন্য ট্রু টোন ক্যাপাবিলিটি পরীক্ষা করুন। ট্রু টোন ক্যাপাবিলিটি পরীক্ষার মাধ্যমে iphone এর ডিসপ্লে ভালো আছে কিনা তা বুঝা যায়। সেই সঙ্গে যাচাই করে নিন এর সকল লক সিস্টেমগুলো ঠিক আছে কিনা।
আরও পড়ুন ঃ পড়ালেখায় মনোযোগ বাড়ানোর সহজ ২০ টি উপায় জেনে নিন।
পুরনো মডেল এড়িয়ে চলুন
সেকেন্ড হ্যান্ড আইফোন কেনার সময় বেশি পুরনো মডেল এড়িয়ে চলুন। ফোন বিশেষজ্ঞদের মতে বেশি পুরনো মডেলের ফোন ব্যবহার করতে গেলে নতুন আপডেটের আইওএস আপডেট এর সাপোর্ট নাও থাকতে পারে। ফলে নতুন কোন অ্যাপস বা ফিসার ব্যবহার করা বা ডাউনলোড করা সম্ভব নাও হতে পারে। এতে করে আপনার আইফোন ব্যবহারে আগ্রহের অনেকখানি ভাটা পড়তে পারে। আইফোন ব্যবহারের স্বাদ মেটানোর জন্য বেশি পুরনো মডেল এড়িয়ে চলুন।
আরও পড়ুন ঃ পল্লী বিদ্যুৎ মিটারের জন্য অনলাইনে আবেদন করার নিয়ম ২০২৫।
ব্যাটারি যাচাই করুন
সেকেন্ড আইফোন কেনার সময় এর ব্যাটারি ভালোমতো যাচাই করে নিতে হবে। প্রথম ব্যবহৃত ব্যাটারিগুলো ফোনের সাথে সেটিংস অবস্থায় থাকে। অ্যাপেল কোম্পানির অ্যাপেল সেটের আইফোনের নতুন ব্যাটারি, বাইরের কভার, চার্জার এগুলোতে এক বছরের ওয়ারেন্টি থাকে। ভালো করে যাচাই করে নিন ব্যাটারি রিপ্লেসমেন্ট করা আছে কিনা। ব্যাটারি ভালো না হলে সেটের চার্জ বেশি সময় ধরে থাকে না। সেজন্য ব্যাটারি ব্যাকআপ ভালো করে যাচাই করে নিন।
আইফোনের ক্যামেরা যাচাই করুন
সেকেন্ড হ্যান্ড আইফোন কেনার সময় ভালো করে এর ক্যামেরা যাচাই করে নিন। iphone ছবি তোলার জন্য বা ভিডিও করার জন্য খুবই ভালো ক্যামেরা সংবলিত হয়ে থাকে। সুতরাং আইফোনটির ক্যামেরা ভালো না ত্রুটিযুক্ত সেটি যাচাই করার জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলো ভালো করে খেয়াল করুন।
- আপনি যে আইফোনটি কিনবেন তার ক্যামেরা চালু করে বেশি আলোতে ও কম আলোতে কোন কিছুর উপরে ফোকাস করে দেখুন।
- ক্যামেরার ফ্লাশ লাইট ব্যবহার করে ভালো করে যাচাই করুন।
- ক্যামেরার বিভিন্ন মডেলগুলো ভালো করে চেক করুন।
- ক্যামেরা চালু করে সূক্ষ্মভাবে যাচাই করার জন্য কানের কাছে ধরুন। যদি কোন শব্দ না হয় তাহলে বুঝতে হবে এর ক্যামেরা সিস্টেমটি ভালো আছে।
হার্ডওয়্যার যাচাই করুন
সেকেন্ড হ্যান্ড আইফোন কেনার সময় ফোনের হার্ডওয়্যারগুলো ভালো মতো যাচাই করে নিন। আইফোনের বডিতে ছোটখাটো দাগ থাকতে পারে কিন্তু দেখতে হবে এই দাগগুলো ফোনে বড় ধরনের আঘাতের কারণে হয়েছে কিনা, ফিজিক্যাল বাটন ঠিক আছে কিনা, টাচ লক বা ফেইস লক ঠিক আছে কিনা, থ্রিডি সেন্সর ওয়াটার ড্যামেজ সেন্সর সবগুলো ভালো করে যাচাই করে নিতে হবে। এই সবগুলো ঠিকমতো কাজ করছে কিনা ভালো করে দেখার পরে সিদ্ধান্ত নেবেন ফোনটি কিনবেন। হার্ডওয়্যারে বেশি পরিমাণে ড্যামেজ বা দাগ থাকলে দরদাম করে ফোনটির দাম কমিয়ে নেওয়া হতে পারে।
পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত কিনা যাচাই করুন
পুরানো আইফোন কেনার সময় অবশ্যই ভালো করে যাচাই করে নিন ফোনটি পানিতে ভিজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা। আই ফোনের লিকুইড কন্টাক্ট ইন্ডিকেটর (LCI) দেখে ফোনটি পানিতে ভিজেছে কিনা তা বোঝা যায়। এলসিআই সাধারণত সিম টের ভিতরে থাকে। এটি খুলে এতে টস লাইট মেরে নড়াচড়া করিয়ে দেখতে হবে, যদি এটি লাল রং দেখায় তাহলে বুঝতে হবে এটি পানিতে ভিজে নষ্ট হয়েছে আর যদি রূপালী বা সাদা রং দেখায় তাহলে বুঝতে হবে এটি এখনো ভালো আছে।
আইফোনের বয়স যাচাই করুন
সেকেন্ড হ্যান্ড iphone কেনার আগে অবশ্যই এর বয়স ভালো করে যাচাই করে নিবেন। একটি নতুন অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করা শুরু থেকে তিন থেকে সাড়ে তিন বছর ভালো মতো ব্যবহার করা যায়। আইফোনে ক্ষেত্রে এর চেয়ে একটু বেশি সময় ব্যবহার করা যায়। যদি একটি আইফোনের বয়স ৩ বছরের বেশি হয় তাহলে ঐ আইফোনটি না কেনাই ভালো। ফোনের বয়স চেক করার জন্য IMEI নাম্বার চেক করে আইফোনের বয়স নির্ণয় করতে পারেন।
স্টোরেজ ক্যাপাসিটি যাচাই করুন
সেকেন্ড হ্যান্ড iphone কেনার সময় এর স্টোরিস ক্যাপাসিটি ভালো করে যাচাই করে নিন। আইফোনের মডেল অনুসারে এর স্টোরিস ক্যাপাসিটি কম বেশি হয়ে থাকে। আইফোনের মডেল অনুসারে বিভিন্ন মডেলের ১৬ জিবি থেকে ৫১২ জন পর্যন্ত স্টোরেজ থাকে। আপনি যে কাজে ফোনটি ব্যবহার করবেন তার উপর ভিত্তি করে আপনার প্রয়োজনীয় স্টোরেজ ক্যাপাসিটির আইফোনটি কিনে নিন। তবে সময়ের প্রেক্ষিতে বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করে ৬৪ জিবির নিচে স্টোরেজ ক্যাপাসিটির আইফোন না কেনাই ভালো।
দাম বা মূল্য যাচাই করুন
দাম বা মূল্য কম পাওয়ার জন্যই মূলত: সেকেন্ড হ্যান্ড আইফোন কেনার জন্য সবাই আগ্রহ প্রকাশ করেন। অল্প দিনের ব্যবহৃত একটি আইফোন দিয়ে প্রয়োজনীয় সব প্রয়োজন মেটানো যায় বিধায় একটু কম দাম দিয়েই পুরাতন আইফোন আপনারা কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তবে সব সময় মনে রাখতে হবে পুরাতন আইফোনের দাম নতুন iphone এর তুলনায় কম হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এই কমটা যদি অতিরিক্ত কম হয় তাহলে এটাতে মনে করতে হবে কোন ঘাপলা আছে। একটি পুরাতন কিন্তু ভালো মানের iphone এর দাম ৪০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে এক লাখ টাকায় পাওয়া যায়। সেজন্য iphone কেনার সময় আপনার বাজেটের দিকে লক্ষ্য রেখে দাম নির্বাচন করুন করে আইফোন কিনে নিন।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক বৃন্দ, সেকেন্ড হ্যান্ড আইফোন কেনার সময় যেগুলো যাচাই করা জরুরী এ সম্পর্কিত আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা আইফোন কেনার আগে যে সকল বিষয়গুলো যাচাই করা জরুরী তার সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন ও উপকৃত হয়েছেন। আইফোনের স্টোরেজ সিস্টেম, ক্যামেরা সিস্টেম, রেজুলেশন, ব্যাটারি ব্যাকআপ এসবগুলো ভালো হলে একটু ভালো সার্ভিস পাওয়া যায়। আইফোন সকলেরই শখের স্বপ্ন! সেজন্য সেকেন্ড হ্যান্ড আইফোন কেনার আগে উক্ত বিষয়গুলো ভালো মত যাচাই বাছাই করে একটি আইফোন কিনতে হবে।
aksgreenit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url