২ মিনিটে অনলাইনে ১৭ ডিজিটের জন্ম নিবন্ধন যাচাই করবেন যেভাবে
অনলাইনে ১৭ ডিজিটের জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে যে তথ্যগুলো দরকার
অনলাইনে ১৭ ডিজিটের জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে গেলে আপনাকে কিছু তথ্য আগে থেকেই জানা থাকতে হবে। জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার জন্য যে তথ্যগুলো প্রয়োজন হবে সেগুলোর একটি তালিকা নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
- ১৭ ডিজিটের জন্ম নিবন্ধন নাম্বার,
- জন্ম তারিখ,
- একটি স্মার্ট ফোন বা ল্যাপটপ বা কম্পিউটার,
- ইন্টারনেট সংযোগ। ইত্যাদি।
অনলাইনে ১৭ ডিজিটের জন্ম নিবন্ধন যাচাই করবেন যেভাবে
অনলাইনে ১৭ ডিজিটের জন্ম নিবন্ধন যাচাই করা কঠিন কোন কাজ নয়। আপনি একটু সচেতন ভাবে আপনার হাতে থাকা স্মার্টফোনটি দিয়েই এই কাজটি সেরে নিতে পারবেন। এই কাজটি বা তথ্যটি যাচাই করার জন্য আপনাকে কিছু নিয়ম নীতি অনুসরণ করতে হবে। তথ্য যাচাই করার জন্য যে কাজগুলো করতে হয় সেগুলো বিভিন্ন ধাপে ধাপে সম্পন্ন হয়। ধাপওয়াইজ তথ্যগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো।
প্রথম ধাপ ঃ ১৭ ডিজিটের জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার জন্য প্রথমেই Https://everify.bdris.gov.bd লিংকে প্রবেশ করুন কিম্বা Google এ verify.bdris.gov.bd সার্চ করে বাংলাদেশ সরকারের জন্ম নিবন্ধন তথ্য যাচাই সম্পর্কিত উক্ত ওয়েবসাইটটি খুলে নিতে পারেন। এই ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের সকল নাগরিকের জন্ম ও মৃত্যু সংক্রান্ত সকল তথ্য সংরক্ষিত থাকে।
আরও পড়ুন ঃ পড়ালেখায় মনোযোগ বাড়ানোর সহজ ২০ টি উপায়।
দ্বিতীয় ধাপ ঃ ১৭ ডিজিটের জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার জন্য verify.bdris.gov.bd লিংকে ক্লিক করলে আপনার সামনে একটি পেজ ওপেন হবে। সেখানে আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে হবে। এই ফর্মে "Birth Registration Number" বার্থ রেজিস্ট্রেশন নম্বর এর ঘরে আপনার জন্ম সনদে উল্লেখিত ১৭ ডিজিটের জন্ম নিবন্ধন নম্বরটি লিখতে হবে।
বি ঃ দ্র ঃ জন্ম নিবন্ধন নম্বরটি লেখার সময় খুব সর্তকতার সহিত জন্ম সনদটি দেখে দেখে সঠিক নাম্বারটি পূরণ করুন। একটি ডিজিটও ভুল হলে তথ্য দেখতে পাবেন না।
আরও পড়ুন ঃ অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার নিয়ম ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সম্পর্কে জানুন।
তৃতীয় ধাপ ঃ উপরের ধাপগুলো সম্পন্ন হয়ে গেলে এই ধাপের নির্দিষ্ট ঘরে অর্থাৎ ডেথ অফ বার্থ (Date of Birth) লেখা ঘরে আপনার জন্ম তারিখটি জন্ম নিবন্ধন সনদ অনুযায়ী সঠিক করে লিখতে হবে। এই ক্ষেত্রে YYYY.MM.DD এই ফর্মেটটি অনুসরণ করতে হবে অর্থাৎ প্রথমে জন্মের সাল তারপরে জন্মের মাস তারপরের ঘরে জন্মের দিন উল্লেখ করতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে 2025.03.26.
বি ঃ দ্র ঃ জন্ম তারিখটি জন্ম সনদ অনুযায়ী সঠিক করে লিখতে হবে।
চতুর্থ ধাপ ঃ উপরের ধাপগুলো সঠিক ভাবে পূরন হয়ে গেলে নিচে একটি ঘর থাকবে যেখানে আপনাকে একটি ক্যাপচা সমাধান করতে হবে। এই ঘরে একটি অংক থাকবে। আপনাকে সেটি সমাধান করে উত্তর নির্দিষ্ট ঘরে লিখে দিতে হবে।
আরও পড়ুন ঃ জিমেইল একাউন্ট তৈরি করার নিয়ম জিমেইল একাউন্ট ডিলিট করার নিয়ম।
বি ঃ দ্র ঃ এই অংকটি বিভিন্ন জনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম আসতে পারে।
পঞ্চম ধাপ ঃ ১৭ ডিজিটের জন্ম নিবন্ধনটি যাচাই করার এ পর্যায়ে উপরে সব ধাপগুলো সঠিকভাবে পুরুন হয়ে গেলে সকল তথ্যগুলো সতর্কতার সহিত যাচাই করে নিন। যাচাই করা হয়ে গেলে সার্চ (search) বাটনের ক্লিক করুন। সার্চ বাটনে ক্লিক করার সাথে সাথে আপনার সামনে একটি পেজ ওপেন হবে, যেখানে আপনি আপনার জন্ম নিবন্ধন সংক্রান্ত সকল তথ্য দেখতে পাবেন।
উক্ত তথ্যগুলো আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদের সাথে মিলিয়ে নিন। সার্চ বাটনে ক্লিক করার পরে যদি রেকর্ড নট ফাউন্ড (Record Not Found) লেখাটি আসে তাহলে প্রথমে বুঝতে হবে আপনার তথ্যগুলোতে ভুল আছে। যদি তথ্যগুলোতে ভুল না থাকে এবং রেকর্ড নট ফাউন্ড (Record Not Found) লেখা আসে তাহলে বুঝতে হবে আপনার জন্ম নিবন্ধনটি অনলাইনে নিবন্ধিত হয়নি বা সমস্যা আছে। এই ক্ষেত্রে আপনার নিকটস্থ ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা বা কমিশনার অফিসে যোগাযোগ করতে হবে।
১৭ ডিজিটের জন্ম নিবন্ধন কেন যাচাই করবেন
১৭ ডিজিটের জন্ম নিবন্ধন যাচাই করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারণ হলো বর্তমান সময়ের হাতে লেখা জন্ম সনদ গ্রহণযোগ্য নয়। সেজন্য জন্ম সনদের ডিজিটাল কপি বা অনলাইন কপি খুবই প্রয়োজন এই দৃষ্টিকোণ থেকে আপনার জন্ম সনদটি ডিজিটাল হয়েছে কিনা এটি জানার একমাত্র উপায় হল অনলাইনে যাচাই-বাছাই করা। যে সকল প্রয়োজনে ১৭ ডিজিটের জন্ম নিবন্ধন সনদ যাচাই করা জরুরী সেগুলো নিম্নরূপ।
আরও পড়ুন ঃ বিদ্যুৎ বিল কমানোর ১৫ টি উপায় জেনে নিন।
- বর্তমানে হাতে লেখা জন্ম সনদের কোন মূল্য নেই। সেই জন্য জন্ম সনদটি অনলাইন বা ডিজিটাল হয়েছে কিনা তা জানা জন্য অনলাইনে সার্চ করা হয়।
- বর্তমানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে গেলে জন্ম সনদপত্র চায় এবং সেটি অবশ্যই অনলাইন কবে হতে হবে। আপনার জন্ম নিবন্ধন অনলাইন হয়েছে কিনাতা যাচাই করে নিতে হবে।
- তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে কিছু অসাধু লোকজন বিভিন্ন তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে নকল জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরি করতে পারে। তাই আপনার সনদ আসল কিনা সেটা যাচাই করার জন্য অনলাইনে আপনার ডিজিটাল নাম্বার দিয়ে যাচাই করা দরকার।
- ভোটার আইডি কার্ড করার জন্য জন্ম সনদের প্রয়োজন। সেজন্য ভোটার আইডি কার্ড করার আগে আপনার জন্ম নিবন্ধন ডিজিটাল হয়েছে কিনা তা যাচাই করে নেওয়া প্রয়োজন।
- আপনার জমিজমা রেজিস্ট্রি করা থেকে সকল গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য জন্ম নিবন্ধনের ডিজিটাল কপি প্রয়োজন। সেজন্য আগে থেকেই অনলাইনে যাচাই করে নেওয়া ভালো।
জন্ম নিবন্ধন নম্বর ১৬ ডিজিট থেকে ১৭ ডিজিট করার নিয়ম
অনলাইনে জন্ম সনদ নিবন্ধন হয়েছে কিনা তা জানার জন্য আপনাকে জন্ম সনদ নম্বরটি ১৭ ডিজিটের হতে হবে। জন্ম নিবন্ধনের শুরুর দিকে ১৩ সংখ্যার নম্বর দিয়ে হাতে লেখা জন্ম সনদ শুরু হয়েছিল তারপরে এটি ১৬ সংখ্যায় উন্নীত করা হয়। বর্তমানে এটি অনলাইনে ১৭ ডিজিটের জন্ম নিবন্ধন নম্বর হয়েছে। যদি আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদের নম্বর ১৭ ডিজিটের না হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে ১৭ ডিজিট করে নিতে হবে।
আরও পড়ুন ঃ অনলাইনে জমির খতিয়ান বের করার নিয়ম জেনে নিন।
হাতে লেখা জন্ম নিবন্ধন সনদটি ১৩ কিংবা ১৬ ডিজিট দিয়ে শুরু করলেও পরবর্তীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে এটিকে ১৭ ডিজিটে উন্নীত করা। ১৩ কিংবা ১৬ ডিজিটের নম্বরটি ১৭ ডিজিট করার জন্য ১৬ ডিজিটের নাম্বারের শেষের ৫ ডিজিটের (পাঁচ সংখ্যার) আগে একটি শূন্য (০) বসিয়ে নিতে হবে। ব্যাস হয়ে গেল ১৬ ডিজিটের জন্ম নিবন্ধন নম্বরটি ১৭ ডিজিটের।
জন্ম নিবন্ধন সম্পর্কে সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)
১৭ ডিজিটের জন্ম নিবন্ধন সম্পর্কে আপনারা অনেক প্রশ্ন গুগলে জিজ্ঞেস করে থাকেন। যে প্রশ্নগুলো অতি সাধারণ কিন্তু খুবই গুরুত্ব বহন করে। আপনাদের এরকম কিছু সাধারণ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা নিয়ে এই পর্বটি লেখা। এখানে পড়লে আপনি প্রয়োজনীয় কিছু সাধারণ প্রশ্ন উত্তর পেয়ে যাবেন।
প্রশ্ন ঃ জন্ম তারিখ দিয়ে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করা যাবে কি?
উত্তর ঃ শুধুমাত্র জন্ম তারিখ দিয়ে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন তথ্য যাচাই করা যায় না, এক্ষেত্রে অবশ্যই জন্ম সনদ লাগবে।
প্রশ্ন ঃ ১৭ মিনিটের জন্ম নিবন্ধন সনদ অনলাইনে যাচাই করার ফি কত?
উত্তর ঃ নিজের মোবাইল থেকে জন্ম নিবন্ধন তথ্য অনলাইনে জানার জন্য কোন ফি লাগে না। যদি কোন কম্পিউটার সেন্টারে তথ্য যাচাই করেন তাহলে সার্ভিস চার্জ তারা নিতে পারে।
প্রশ্ন ঃ অনলাইনে জন্ম তারিখ দিয়ে কি জন্ম নিবন্ধন যাচাই করা যায়?
উত্তর ঃ জ্বি, জন্ম তারিখ দিয়ে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করা যায়। এক্ষেত্রে অফিসিয়াল লিংকে (everify.bdris.gov.bd) প্রবেশ করে জন্ম তারিখসহ প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে পারবেন। বিস্তারিত জানার জন্য আর্টিকেলটি পড়ে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার নিয়মটি শিখে নিন।
প্রশ্ন ঃ মোবাইলের মাধ্যমে অনলাইনে জন্ম সনদ যাচাই করা যাবে কি?
উত্তর ঃজ্বি, মোবাইলের মাধ্যমে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করা যাবে। এক্ষেত্রে আপনি উপরের আর্টিকেলটি করে নিয়ম শিখে নিতে পারেন
প্রশ্ন ঃ জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট লিংক কোনটি?
উত্তর ঃ জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট লিংকটি হলো verify.bdris.gov.bd
প্রশ্ন ঃ শুধু নাম দিয়ে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করা যায় কি?
উত্তর ঃ জ্বি, যাচাই করা যায়। তবে, এক্ষেত্রে শুধু নাম দিয়ে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার জন্য আপনাকে আপনার নিকটস্থ ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশনে কাউন্সিলরের অফিসে গিয়ে জন্ম নিবন্ধন সার্ভারে সংরক্ষিত ডাটাবেজ থেকে যেকোনো ব্যক্তির নাম দিয়ে জন্ম নিবন্ধন তথ্য খুঁজে বের করা যায়।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক বৃন্দ, জন্ম নিবন্ধন সনদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সনদ যা জীবনের প্রথম সরকারি হিসেবে পরিগণিত হয়। এই সনদ অনুযায়ী আপনার স্কুল কলেজের রেজিস্ট্রেশনসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়ে থাকে। সে জন্য এই জন্ম নিবন্ধনটি যেন সঠিকভাবে হয় এবং অনলাইনে ডিজিটাল কপি থাকে সে বিষয়গুলো ভালভাবে খেয়াল রাখতে হবে।
আশা করি, আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা মাত্র ২ মিনিটে অনলাইনে ১৭ ডিজিটের জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার প্রক্রিয়া জানতে পেরেছেন ও উপকৃত হয়েছেন এ ধরনের আরও আপডেট তথ্য পাওয়ার জন্য চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে আমাদের সাথেই থাকুন তথ্যগুলো শেয়ার করে দিন যেন অন্যরাও জানতে পারে। আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
aksgreenit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url