শিশুদের মোবাইল ফোন আসক্তি কমানোর ১৫ টি উপায় জেনে নিন
শিশুদের মোবাইল ফোন আসক্তি কমানোর ১৫ টি উপায় সম্পর্কে জানানোর জন্যই আজকের আর্টিকেলটি লেখা। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির ডিজিটাল যুগে মোবাইল ফোন সবার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। যার মাধ্যমে নিমিষেই বাংলাদেশ তথা গোটা বিশ্বের খবরা-খবর জেনে নেওয়া যায়। এই বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি তথা মোবাইল ফোনের উপকারিতাই বেশি। অভিভাবকের সামান্য ভুলের কারণে শিশুরা মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়ে পড়ছে!
ছবিটি সংগৃহীত
আজকের আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা জানতে পারবেন শিশুদের মোবাইল ফোনের আসক্তি কিভাবে কমানো যায়? মোবাইল ফোনের উপকারি দিক, মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর দিক ও মোবাইল ফোন সম্পর্কে এধরনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো। চলুন আর দেরি না করে মোবাইল ফোনের প্রতি শিশুদের আশক্তি কমানোর উপায় সম্পর্কে জেনে নিই।
পেজ সুচিপত্র
শিশুদের মোবাইল ফোন আসক্তি কমানোর উপায়
শিশুদের মোবাইল ফোন আসক্তি কমানোর ১৫ টি উপায় সম্পর্কিত আলোচনার আগে আপদেরকে জানিয়ে দেবো শিশুরা কিভাবে মোবাইল ফোনে আশক্ত হয় সে সম্পর্কে। শিশুরা তো আর নিজের থেকে ফোন ব্যবহার করতে পারেনা। অনেক বাবা-মা ও অভিভাবকরা আছেন যারা শিশুদেরকে মোবাইল ফোন বা স্মার্টফোনে মিউজিক বাজিয়ে তাদেরকে খাওয়া-দাওয়া করান, খেলাধুলা করার অথবা শান্ত রাখার চেষ্টা করেন। বর্তমানে মোবাইলের মাধ্যমে অনেক বিষয়ে পড়ালেখা করানো হয়। এভাবেই মোবাইল দেখতে দেখতে দিনে দিনে শিশুরা মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়ে পড়ে। আর্টিকেলের নিচের দিকে পড়ে জেনে নিন শিশুদের মোবাইল ফোনের প্রতি আসক্তি কমানোর উপায়গুলো।
বড়দের মোবাইল ফোন ব্যবহার কমাতে হবে
শিশুদের মোবাইল ফোন আসক্তি কমানোর ১৫ টি উপায় সম্পর্কিত আর্টিকেলটিতে এখন আমরা আপনাদেরকে জানাবো শিশুদের মোবাইল ফোনে আসক্তি কমানোর জন্য বড়দের বড়দের স্মার্টফোন কম ব্যবহার কমাতে হবে সে সম্পর্কে। ফোন ব্যবহারের সময় বড়দেরকে সতর্ক থাকতে হবে প্রয়োজনীয় ফোনালাপ ছাড়া
আরোও পড়ুন ঃ জন্মদিনের গিফট আইডিয়া ২০২৫।
- ছোটদের সামনে ফোন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
- মোবাইল ফোনে গেম খেলে অথবা ভিডিও দেখে সময় কাটানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
- বড়দের ফোন ব্যবহার একদিন দুইদিন দেখতে দেখতে শিশুরা মোবাইল ফোন আসক্ত হয়। কাজেই শিশুদের সামনে ফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।
- মোবাইল ফোন আসক্তি কমানোর জন্য বাচ্চাদেরকে সময় দিতে হবে, যা বড়দের একটি দায়িত্ব।
স্মার্টফোন ব্যবহারের সময়সীমা নির্ধারণ করে দিতে হবে
সকলকে নিয়ে নো ডিভাইস নিয়ম অনুসরণ করতে হবে
শিশুদের মোবাইল ফোন আসক্তি কমানোর ১৫ টি উপায়ের মধ্যে এটি একটি উপায় হতে পারে, শিশুসহ বাড়ির সকলকে নিয়ে নো ডিভাইস নিয়ম অনুসরণ করা অর্থাৎ একটা সময় থাকবে যে সময়ে কেউ ইলেকট্রিক ডিভাইস তথা মোবাইল, টিভি ইত্যাদি চর্চা করবে না। এছাড়াও নো ডিভাইস নিয়ম অনুসরণ করার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে।
- বাচ্চাদেরকে সঠিক সময়ে ঘুমানোর ব্যবস্থা করতে হবে,
- বাচ্চাদের বিছানায় পাশে মোবাইল ফোন রাখা যাবে না,
- বাচ্চাদের খাওয়ার সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে না,
- বাচ্চাদের ঘুমের সময় যেন ডিস্টার্ব না হয়, সেজন্য ঘুমের আগে এবং ঘুমানো অবস্থায় উচ্চস্বরে মোবাইল ব্যবহার করা যাবে না।
মজার মজার বই পড়ার অভ্যাস করাতে হবে
শিশুদের মোবাইল ফোন আসক্তি কমানোর ১৫ টি উপায়ের মধ্যে একটি অন্যতম উপায় হলো বই পড়া। মোবাইল আসক্তি কমানোর জন্য বাচ্চাদেরকে ক্লাসের পড়ালেখার পাশাপাশি মজার মজার গল্পের বই, মনিষী জীবনে ও ধর্মীয় বই পড়ার অভ্যাস করাতে হবে। এতে করে মোবাইলের প্রতি আসক্তি কমে গিয়ে মেধার বিকাশ ঘড়তে সহায়তা করবে।
আরও পড়ুন ঃ পড়ালেখায় মনোযোগ বাড়ানোর সহজ ২০ টি উপায় জেনে নিন।
কাজের রুটিন তৈরি করে দিন
শিশুদের মোবাইল ফোন আসক্তি কমানোর ১৫ টি উপায়ের মধ্যে একটি হলো কাজের রুটি তৈরি করে দেওয়া। শিশুদেরকে মোবাইল ফোন আসক্তি কমানোর জন্য শিশুর অভিভাবক কথা বাবা মাকে বেশি সচেতন থাকতে হবে শিশু যে ক্লাসে পড়ুক না কেন সে ক্লাস থেকেই তার কাজের রুটিন তৈরি করে দিতে হবে যাতে সব কাজ গুলো ঠিকমতো করতে পারে। এই রুটিন গুলো তৈরি করার সময় তাদের পড়াশোনা ও খেলাধুলার করে দিতে হবে
আরও পড়ুন ঃ অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার নিয়ম ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সম্পর্কে জানুন।
শিশুদেরকে শখের কাজ শেখাতে হবে
শিশুদের মোবাইল ফোন আসক্তি কমানোর ১৫ টি উপায়ের মধ্যে একটি অন্যতম উপায় হলো শিশুদেরকে বিভিন্ন ধরনের শখের কাজ শেখাতে হবে। শিশুরা যখনই বাসাতে একা থাকে তখন তারা বোরিং ফিল করে। এই বোরিং কাটানোর জন্য তারা একটা কিছু খুঁজে নেয়। সেটি হতে পারে টিভি দেখা অথবা মোবাইল ফোন ব্যবহার করা ইত্যাদি। মোবাইল ফোন আসক্তি কমানোর জন্য শিশুদেরকে নিম্নোক্ত শখের কাজগুলো শেখাতে হবে। এতে করে কাজের আনন্দে মোবাইল ফোন আসক্তি কিছুটা হলেও কমে যাবে। শখের কাজগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য গুলো হলো
আরও পড়ুন ঃ বিদ্যুৎ বিল কমানোর ১৫ টি উপায় জেনে নিন
- শিশুদের নাচ শেখানো,
- শিশুদের সাঁতার শেখানো,
- শিশুদের সঙ্গে সব সময় স্নেহশীল আচরণ করতে হবে,
- শিশুদের সৃজনশীল কাজ শেখাতে হবে,
- তারা এই কাজগুলোতে ব্যস্ত থাকলে অবসর সময়ে না পেলে মোবাইল আসক্তি কমে যাবে।
উক্ত কাজগুলোর মাধ্যমে শিশুদের মোবাইল আসক্তি কমই মেধার বিকাশ ঘটে।
সচেতনতা বৃদ্ধি
শিশুদেরকে মোবাইল ফোন সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। মোবাইল ফোন বেশি ব্যবহার করলে চোখের ও স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয় সে বিষয়গুলো বেশি বেশি স্মরণ করে দিতে হবে। স্মার্ট ফোন তথা ইন্টারনেট বেশি ঘাটাঘাটি করলে পড়াশোনার ক্ষতি হতে পারে, চোখের ক্ষতি হতে পারে, এই বিষয়গুলো তাদেরকে ভালোভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে। এ সকল বিষয়গুলো বুঝে তারা নিজের থেকেই স্মার্টফোন কম ব্যবহার করে সেদিকে সতর্ক করে দিতে হবে।
একটি নির্দিষ্ট সময়ে পারিবারিক আড্ডা
শিশুদের মোবাইল ফোন আসক্তি কমানোর ১৫ টি উপায়ের মধ্যে একটি অন্যতম উপায় হলো পারিবারিক আড্ডা। পরিবারের সবাইকে নিয়ে প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য পারিবারিক আড্ডার ব্যবস্থা করতে হবে। শিশুদেরকে নিয়ে পারিবারিক আড্ডা দিলে শিশুদের মোবাইল ফোনের প্রতি আসক্তি কমে গিয়ে এই আড্ডাতে মনোযোগী হয়। এতে করে তাদের মোবাইল ফোনের আসক্তি কমবে এবং মন মানসিকতার বিকাশ ঘটবে।
অভিভাবকের দায়িত্ব
বাচ্চারা যখন পড়াশোনার নামে ইন্টারনেট ব্যবহার করবে তখন তাদের সাথে অভিভাবক হিসেবে আপনি বিষয়গুলো খেয়াল রাখুন। তারা আসলেই পড়াশোনায় ব্যস্ত নাকি মোবাইলে অন্য কোন কনটেন্ট দেখছে। যখন একজন অভিভাবক সাথে থাকবে তখন সে পড়াশোনা ছাড়া অন্য কোন কন্টেন্ট গুলো দেখার সুযোগ পাবে না। আপনার দায়িত্ব বাচ্চাদেরকে স্মার্টফোনে ঠিকভাবে পড়াশোনা দেখে নেওয়া ও অন্যান্য ভিডিও বা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের অনুউৎসাহিত করা। অভিভাবক হিভাবে হিসেবে একটু সচেতন হলে শিশুদের মোবাইল ফোন আশক্তি অনেক কমে যাবে।
বাড়ির বাইরে খেলাধুলার অভ্যাস
শিশুদের মোবাইল ফোন আসক্তি কমানোর ১৫ টি উপায়ের মধ্যে অন্যতম একটি উপায় হলো শিশুদেরকে বাড়ির বাহিরে অন্যান্য বন্ধুদের সাথে খেলার সুযোগ করে দিতে হবে। শিশুদেরকে পড়াশোনা অথবা অন্য কাজের মাধ্যমে সব সময় বাড়ির ভিতরে আটকে না রেখে বিকালের নির্দিষ্ট সময়ে বাহিরে মাঠে অন্যান্য বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা (ক্রিকেট, ফুটবল, গল্লাছুট খেলা ইত্যাদি) করতে দিতে হবে। এতে করে তাদের মোবাইলের প্রতি আসক্তি কমবে এবং শারীরিক ও মানসিক বুদ্ধির বিকাশ ঘটবে।
সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ
বাচ্চাদেরকে নিয়ে সামাজিক বিভিন্ন কার্যক্রমে সম্ভব হলে অংশগ্রহণ করতে হবে। সামাজিক বিভিন্ন কার্যক্রমে (বিয়ের অনুষ্ঠান, জন্মদিনের অনুষ্ঠান ইত্যাদি) অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে শিশুদের বাড়িতে বসে থাকলে যে একঘেয়েমি সেটি দূর হয়। সামাজিক কার্যক্রম সম্পর্কে তাদের ধারণা বাড়বে এতে করে মোবাইল নিয়ে গেম খেলা বা ভিডিও দেখার প্রতি আকর্ষণ কমে যাবে। দিনে দিনে তাদের মাঝে সামাজিক কার্যক্রমের উদ্বুদ্ধ হবে ও মেধার বিকাশ ঘটবে।
প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার শেখান
মোবাইল ফোন আসক্তি কমানোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো তাদেরকে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার শেখানো। মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন স্মার্ট ডিভাইস তথা প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার শিশুদের শেখাতে হবে। যেকোনো ইলেকট্রিক ডিভাইস বেশি সময় ধরে ব্যবহার করলে চোখের ক্ষতি হতে পারে, কানের সমস্যা হতে পারে, মানসিক গঠন ব্যাহত হতে পারে, বুদ্ধির বিকাশ ব্যাহত হতে পারে এই বিষয়গুলো বাচ্চাদেরকে বেশি বেশি বোঝাতে হবে পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সময়টুকু প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার তাদেরকে বুঝিয়ে দিতে হবে। তাহলে দিনে দিনে শিশুকে মোবাইল ফোন আসক্তি কমে যাবে।
শিশুদের বিকল্প কাজে উদ্বুদ্ধ করুন
শিশুদের মোবাইল ফোন আসক্তি কমানোর ১৫ টি উপায়ের মধ্যে একটি অন্যতম উপায় হতে পারে তাদেরকে বিকল্প কাজে উদ্বুদ্ধ করন। বিকল্প কাজের মাধ্যমে পড়াশোনা শেষ করে যখনই বাড়িতে অনেক সময় থাকে তখন তারা বোরিং ফিল করে। তাদের এই একঘেয়েমি দূর করার জন্য তাদের কিছু বিগল্প কাজে উদ্বুদ্ধ করা অভিভাবকদের উচিত। যেমন ধরুন বাচ্চাদের অংকন শেখাতে পারেন, বাড়িতে বড়দের পাশাপাশি ছোটদেরকেও পারিবারিক কাজগুলো ভাগ করে দিতে পারেন, আলমারি ঠিক করা, আলনাতে কাপড় গোছানো, সোফা সেট গোছানো ইত্যাদি। পারিবারিক এই বিকল্প কাজের মাধ্যমে বাচ্চারা মোবাইলের আসক্তি কমবে ও পড়াশোনা আগ্রহ বাড়ে
ইন্টারনেট ব্যবহারে নিরাপত্তা
শিশুদেরকে ইন্টারনেট ব্যবহারে নিরাপত্তার বিষয়গুলো সম্পর্কে বুঝিয়ে দিন। ইন্টারনেট ব্যবহারে আরো সচেতন ও সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য তাদেরকে উপদেশ দিতে থাকুন। ইন্টারনেট ব্যবহারের সুফল ও কুফল সম্পর্কে তাদেরকে বুঝিয়ে দিন এবং তারা যেন এ বিষয়গুলো খেয়াল রেখে ইন্টারনেট ব্যবহার করে সে বিষয়ে খেয়াল রাখুন।
উপসংহার
আশা করি আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা শিশুদের ইন্টারনেট তথা স্মার্ট ফোন আসক্তি কমানোর উপায় গুলো বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন ও উপকৃত হয়েছেন। শিশুদেরকে স্মার্টফোনে আসক্তি কমানোর জন্য অভিভাবক ও বাবা-মাকেই বেশি সচেতন হতে হবে। ভবিষ্যতে শিশুদের ভালোর জন্য আজকে তাদেরকে মোবাইল ফোন ব্যবহার সীমিত করে দিতে হবে।
প্রিয় পাঠক বৃন্দ, বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, মোবাইল ফোনে অভিভাবকরায় মূলত বেশি আসক্ত যার কারণে বাচ্চারাও এটা দেখে দেখে শিখে ফেলতেছে। সুতরাং স্মার্টফোনের প্রতি নিজের আসক্তি কমান, বাচ্চাদেরকে আসক্ত হওয়া থেকে বিরত রাখুন। আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
aksgreenit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url