চোখে অঞ্জনি উঠলে কি করবেন জেনে নিন

চোখে অঞ্জনি উঠলে কি করবেন জেনে নিন। বেশিরভাগ মানুষের জীবনে কোন না কোন সময় চোখের অঞ্জনি উঠার সমস্যায় ভুগে থাকেন। চোখের এই সমস্যা অনেক জটিল না হলেও বেশ কয়েকদিন বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে থাকতে হয়। দীর্ঘদিন অবহেলার করলে চোখের অঞ্জনি বেশ জটিলতা ধারণ করতে পারে। হয়ে যেতে পারে চোখের বড় ধরনের সমস্যা। 

চোখে অঞ্জনি উঠলে কি করবেন জেনে নিন

আজকের আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা জানতে পারবেন অঞ্জনি কাকে বলে? চোখে অঞ্জনি কেন উঠে? অঞ্জনি উঠলে কি করতে হয়? অঞ্জনির লক্ষণ বা উপসর্গ, অঞ্জনি উঠলে যেগুলো করা যাবে না, অঞ্জলির সমাধান বা চিকিৎসা, এ ধরনের আরো অনেক বিষয় সম্পর্কে। চলুন আর দেরি না করে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

পেজ সুচিপত্র

অঞ্জনি কাকে বলে বা অঞ্জনি কি?

চোখে অঞ্জনি উঠলে কি করবেন এটি জানার আগে আপনাদের জানা দরকার অঞ্জনি কাকে বলে বা অঞ্জনি কি সে সম্পর্কে। চোখের ভিতরে অনেকগুলো গ্ল্যান্ড বা গ্রন্থি থাকে। এই গ্রন্থিগুলোর কোনটি চোখে তৈলাক্ত পদার্থ নিঃসরণ করে, চোখকে শুষ্কতার হাত থেকে রক্ষা করে আবার কোনটি দিয়ে চোখের পানি বা ঘাম নিষ্কাশিত হয়। এই গ্রন্থিগুলোর কোন একটির মুখ যে কোন কারনে বন্ধ হয়ে গেলে এর ভিতরে ময়লা জমে গোটা বা শক্ত হয়ে গুটির মতো সৃষ্টি হয় সেটিকেই অঞ্জনি বলে।

অঞ্জনিকে মেডিকেল সাইন্স এর ভাষায় স্টাই (Stye) বা হরডিওলাম বা আইলিড সিস্ট বলা হয়। স্টাই থেকেও অনেক সময় ক্যালাজিয়ন এর সমস্যা হতে পারে। কিন্তু মনে রাখতে হবে স্টাই ও ক্যালাজিয়ন আপাত দৃষ্টিতে এক মনে হলেও দুটি আলাদা আলাদা সমস্যা। এগুলো সাধারণত তৈল গ্রন্থির মুখ বন্ধ হয়ে ভিতরে ময়লা জমে আস্তে আস্তে ফুলতে থাকে এবং শক্ত বা গোটায় পরিণত হয়ে  গুটি আকারে চোখের পাতায় ঠেলে উঠলে তখন এগুলোকে অঞ্জনি বলা হয়। এগুলো কোন ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে তৈরি হয় না। তবে পরবর্তী সময়ে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে প্রদাহের দৃষ্টি হতে পারে।

আরও পড়ুন ঃ আগুনে চামড়া পুড়ে গেলে করণীয় কি জেনে নিন।

চোখে অঞ্জনি উঠলে কি করবেন?

চোখে অঞ্জনি উঠলে কি করবেন এবিষয়টি অনেকেই জানেন না। আবারও জানার জন্য অনেকেই গুগলে সার্চ করে থাকেন। চোখে অঞ্জলি উঠলে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো সতর্কতার সহিত করতে হবে। এতে করে দ্রুততার সহিত চোখের অঞ্জনি ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

  • চোখে অঞ্জনি উঠলে সুতির নরম কাপড় গরম পানিতে ভিজিয়ে চিপে নিয়ে অঞ্জনির উপর সেঁক দিবেন।
  • চোখ ও চোখের পাতা সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে, প্রয়োজনে পরিস্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
  • কাজের ফাঁকে অপরিষ্কার হাত চোখে দেয়ার অভ্যাস বন্ধ করতে হবে।
  • রাত জেগে কাজ করার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। এতে করে চোখের কথা বেড়ে যায়।
  • চোখে হাত দেওয়ার আগে হাত ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
  • চোখে দেখতে সমস্যা হলে পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় চশমা ব্যবহার করতে হবে।
  • সাধারণত ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে চোখের অঞ্জনি ভালো হয়ে যায়, যদি না হয় তাহলে একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করে নিতে হবে।
  • প্রসাধনী ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, দিনের শেষে ভালো করে ধুয়ে প্রসাধনী তুলে ফেলতে হবে, চোখের পাতায় যেন প্রসাধনী আটকে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
  • মাথার খুশকি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে ও চোখের পাতায় খুশকি হলে পরিষ্কার করতে হবে।

চোখে অঞ্জনি কেন উঠে?

চোখে অঞ্জনি উঠলে কি করবেন বা চোখে অঞ্জনি কেন ওঠে এ বিষয়টি বেশ জটিলতার সৃষ্টি করে। চোখে অঞ্জনি উঠার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। তবে বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন চোখের তৈল গ্রন্থিগুলোর মুখ বন্ধ হয়ে গেলে এর ভিতর তৈল পদার্থ জমা হতে থাকে এবং আস্তে আস্তে জমে গিয়ে শক্ত গুটির মতো হয়ে অঞ্জনি তৈরি হয়। এছাড়াও অন্যান্য যে সকল কারনে চোখে অঞ্জনি উঠে থাকে সেগুলো হলো - 

চোখে অঞ্জনি কেন উঠে
  • তৈলগ্রন্থির মুখ বন্ধ হয়ে অঞ্জনি উঠতে পারে,
  • চোখে ময়লা জমলে অঞ্জনি উঠতে পারে,
  • চোখের পাতায় খুশকি বা মোরা টিস্যু (কোষ) আটকে গেলেও অঞ্জনি উঠতে পারে।
  • অপরিষ্কার পানি চোখে লাগালে অঞ্জনি হতে পারে। ইত্যাদি।

অঞ্জনির লক্ষণ বা উপসর্গ

চোখে অঞ্জনি উঠা মানেই একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হওয়া। চোখের পাতার উপরে বা ভিতরে উভয় পাশেই অঞ্জনি উঠতে পারে। চোখে অঞ্জনি উঠলে কিছু কিছু লক্ষণ বা উপসর্গ প্রকাশ পায়। যেমন - 

  • চোখে পাপড়ির গোড়ায় ছোট ছোট ফুসকুড়ি বের হয়।
  • চোখের পাতা থেকে একটু দূরে বা ফাঁকে অঞ্জনি বের হয়।
  • পাপড়ির গোড়ায় শক্ত বা শক্ত ময়লা জমতে থাকে ফলে ফুলে যায়।
  • চোখে ব্যথা হয়।
  • চোখে সব সময় অস্বস্তি অনুভূত হয়।
  • চোখ স্পর্শ করলে ব্যথা অনুভূত হয়।
  • অনেক সময় চোখ লাল হয়ে যায়।
  • পাপড়ির উপরে লালচে ভাব দেখা যায়।
  • পাপড়ির গোড়ায় শক্ত বা শক্ত ময়লা জমতে থাকে ফলে ফুলে যায়।
  • অঞ্জনি থেকে অনেক সময় পুজোর মত বের হয়। ইত্যাদি।

অঞ্জনির চিকিৎসা বা সমাধান

চোখে অঞ্জনি উঠলে কি করবেন এই আর্টিকেলটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হল চোখে অঞ্জনি উঠলে কি ধরনের চিকিৎসা বা সমাধান রয়েছে সেগুলো জানা। অঞ্জলি চিকিৎসা বা সমাধান গুলো হল - 

  • গরম সেঁক দিলে আরাম পাওয়া যায়,
  • এন্টিবায়োটিক ড্রপ নিয়ম মেনে ব্যবহার করতে হয়,
  •  অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপের সাথে অনেক সময় অ্যান্টিবায়োটিক ঔষুধ খেতে হয়,
  • ব্যথা দূর করার জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ নাপা, ফার্স্ট, এইচ খেতে হয়,
  • অনেক সময় চুলকায়, চুলকানি বন্ধ করার এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ খেতে হয়। ইত্যাদি।

যাদের চোখে অঞ্জনি উঠার ঝুঁকি বেশি

চোখে অঞ্জনি উঠলে কি করবেন এ সম্পর্কিত আর্টিকেলটির চোখে অণ্ডনে ওটা প্রসঙ্গে বিভিন্ন তথ্যগুলো আপনারা জেনেছেন অনেক সময় আপনারা গুগলে সার্চ করেন তাদের অনলাইনে ওটার ঝুঁকি বেশি সম্পর্কে তথ্য জানার জন্য তো আর্টিকেলের এই অংশটুকু পড়লে আপনি এই প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। অনেক সময় দেখা যায় কারো কারো চোখে প্রায়ই অঞ্জনি উঠে আবার অনেকেরই অঞ্জনি হয় না। বিভিন্ন কারণে চোখে অঞ্জনি উঠার ঝুঁকি বাড়ে। কারণগুলো হলো - 
  • হরমোনের প্রভাব,
  • যাদের ত্বক শুষ্ক,
  • উচ্চ কোলেস্টেরলের প্রভাব,
  • যাদের চোখের পাতায় খুশকি বা প্লেপাড়ায়টিস থাকে,
  • যারা হাত দিয়ে বারবার চোখ চুলকায় বা রগড়ায়, 
  • যাদের চোখে পাতায় সেবোরিক ডার্মাডাইটিস বা রসাসিয়া একমি থাকে,
  • চোখে স্ট্রেসের কারণেও অনেকের অঞ্জনি উঠে,
  • চোখে প্রসাধনী ব্যবহারের কারণেও অঞ্জনি উঠার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। ইত্যাদি।

চোখে অঞ্জনি উঠলে যা করা যাবে না 

চোখে অঞ্জনি উঠলে কি করবেন এটি উপরোক্ত আলোচনা পড়ে আপনারা জানতে পেরেছেন। চোখে অঞ্জনি উঠলে কি করা যাবে না এ তথ্যগুলো জানার জন্য আপনারা অনেক সময় গুগলে সার্চ করে থাকেন। আর্টিকেলের এ অংশটুকু পড়ে জেনে নিন চোখে অঞ্জনি উঠলে যা যা করা যাবে না সেগুলো হলো - 

  • চোখে বারবার অপরিষ্কার হাত দেওয়া যাবে না।
  • অঞ্জলি উঠলে চোখ ঘোঁষাঘেঁষি করা যাবে না।
  • অঞ্জনি উঠলে চুলকাতে পারে এজন্য পরিষ্কার, নরম ও ভেজা শুতির কাপড় দিয়ে আলতো ভাবে নাড়তে হবে।
  • চোখে অঞ্জনি উঠলে বেশি ক্ষারযুক্ত সাবান দিয়ে বারবার ধোওয়া যাবে না।
  • ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ বা ড্রপ বা মলম ব্যবহার করা যাবে না। 

উপসংহার

আশা করি, আজকের চোখে অঞ্জনি উঠলে কি করবেন এ সম্পর্কিত আর্টিকেলটি পড়ে চোখের অঞ্জনি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্যগুলো বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন ও উপকৃত হয়েছেন। এরকম আরও আপডেট তথ্য পাওয়ার জন্য চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে আমাদের সাথেই থাকুন, আর আর্টিকেলটি শেয়ার করে দিন যেন আপনার প্রিয়জনেরাও এ তথ্যগুলো জানতে পারে।

প্রিয় পাঠক বৃন্দ, চোখ মানব শরীরের অত্যন্ত সংবেদনশীল অঙ্গ। সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার সহিত চোখের যত্ন নিতে হবে‌। চোখের অঞ্জনি সহ যেকোন সমস্যা হলেই সচেতন থেকে যত্ন নিন এবং একজন ভালো চক্ষু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করুন। চোখের যত্নের নিন দৃষ্টি ঠিক রাখুন। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া চোখে কোন ধরনের মলম বা ড্রপ ব্যবহার করবেন না। আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

aksgreenit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url