আগুনে চামড়া পুড়ে গেলে করণীয় কি জেনে নিন

আগুনে চামড়া পুড়ে গেলে করণীয় কি? অথবা আগুনে পুড়ে গেলে প্রাথমিকভাবে কি করা উচিত? এগুলো অনেকে জানলেও বেশিরভাগ লোকজনই জানেন না। দৈনন্দিন জীবনে কাজে-কর্মে, রান্না-বান্না এবং বিভিন্ন দূর্ঘটনায় আগুন কিম্বা গরম পানি পড়ে অথবা বৈদ্যুতিক সর্ট সার্কিট থেকে সৃষ্ট আগুনে মানব শরীরের চামড়া পুড়ে যেতে পারে। আগুনে চামড়া পুড়ে গেলে করণীয় কি এগুলোই আজকের আর্টিকেলের আলোচ্য বিষয়।

আগুনে চামড়া পুড়ে গেলে করনীয়

আজকের আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা জানতে পারবেন বিভিন্ন ভাবে চামড়া পুড়ে যাওয়া বা ঝলশে যাওয়া কেসগুলোতে প্রাথমিক অবস্থায় কি করতে হবে? আরও জানতে পারবেন পুড়ে যাওয়া ত্বকের অবস্থা বা ডিগ্রি অনুসারে কি ধরনের প্রাথমিক ব্যবস্থা নিতে হবে, এক্সিডেন্টাল কেসগুলোতে অনেক সময় ইঞ্জিনের গরম পানিতে বা আগুনে পুড়ে গেলে কি ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত এরকম বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে।

পেজ সুচিপত্র

আগুনে চামড়া পুড়ে গেলে করণীয় 

আগুনে চামড়া পুড়ে গেলে করণীয় কি বা কি করা উচিত এ বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানার জন্য এই আর্টিকেলটি পুরোপুরি মনোযোগ সহকারে পড়ে নিন। আগুনে কিংবা গরম পানিতে অথবা অন্য কোন কারণে বা যেভাবেই পুড়ে যাক না কেন তার ধরন ও তীব্রতা অনুসারে রোগীকে প্রাথমিক পরিচর্যা ও প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করতে হবে। রোগীর পরিস্থিতি অনুযায়ী দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থাও করতে হবে। চামড়া পুড়ে যাওয়া রোগীকে যে ভাবে প্রাথমিক সেবা ও চিকিৎসা প্রদান করতে হবে। 

  • আগুন, গরম পানি বা গরম বস্তুর সামনে থেকে রোগীকে সরিয়ে নিতে হবে।
  • আগুনে পোড়া জায়গায় যদি কাপড়-চোপড় লেগে থাকে সেটি খুব সাবধানে সরিয়ে নিতে হবে।
  • চামড়ার পোড়া অংশে যেন কোন ময়না আবর্জনা না থাকে সেদিকে সতর্কতার সহিত খেয়াল রাখতে হবে।
  • আগুনে পুড়ে চামড়ায় যাওয়া কাপড় টানাটানি না করে প্রয়োজনে কাপড়ের আটকে যাওয়া অংশ কেটে দিতে হবে।
  • পোড়া অংশে যদি কোন ময়না আবর্জনা বা ধূলিকণা লেগে থাকে তাহলে সতর্কতার সহিত পরিষ্কার করতে হবে।
  • চমড়ার পোড়া অংশে আংটি, চেইন, চুড়ি, ঘড়ি ইত্যাদি পরে থাকলে সেগুলো খুলে নিতে হবে। 
  • চামড়ার পোড়া জায়গাতে ঠান্ডা পানি দিতে হবে,পরিস্কার  পানি দিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট ধরে ধুতে হবে।
  • যাতে করে ধুলাবালি বা ময়লা পড়তে না পারে এবং সংক্রামন প্রতিরোধ করা যায় সেজন্য পরিষ্কার নরম কাপড় বা গজ দিয়ে চামড়ার পড়া অংশ ঢেকে রাখতে হবে।
  • বেশি পরিমাণে পুড়ে গেলে যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে। 
  • সিলভার সালফাডায়াজিন (বার্না ক্রিম) একটি ঔষধ যা ক্ষত স্থানে লাগালে জ্বালাপোড়া অনেক কমে যায়।
  • ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল (নাপা, এইচ, ফাস্ট) জাতীয় ঔষুধ খাওয়াতে হবে।
  • অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম ক্ষতস্থানে লাগাতে পারেন।

আগুনে চামড়া পুড়ে গেলে যেগুলো করা যাবে না

আগুনে চামড়া পুড়ে গেলে করণীয় কি এগুলো উপরোক্ত আলোচনা পড়ে আপনারা জানতে পেরেছেন। এই অংশটুকু পড়লে আপনারা জানতে পারবেন আগুনে পুড়ে গেলে যেগুলো করা যাবে না বা যেগুলো করা উচিত নয় সে সম্পর্কে। আগুনে পুড়ে গেলে আপনারা প্রায় কিছু কাজ করে থাকেন যে কাজগুলো পোড়া ক্ষতের জন্য আরো ক্ষতিকর। আগুনে চামড়া পুড়ে গেলে যেগুলো করা যাবে না সেগুলো নিয়ে উল্লেখ করা হলো - 

  • ডিম ভেঙ্গে লাগানো যাবে না,
  • টুথপেস্ট লাগানো যাবে না,
  • ভেসলিন, ক্রিম বা তেল লাগানো যাবে না,
  • বরফ বা বরফ শীতল পানি ব্যবহার করা যাবে না,
  • ক্ষতস্থানে ফোসকা গেলে (ফাটানো) দেওয়া যাবে না,
  • ক্ষতস্থানে টিস্যু, তুলা বা ক্রিম লাগানো যাবে না,
  • ক্ষতস্থানে গাছ-গাছড়া বা কোন গাছের পাতা বা ঘাস পাতা পিষে লাগানো যাবে না। ইত্যাদি।

চামড়া কিভাবে পুড়ে

আগুনে চামড়া পুড়ে গেলে করণীয় কি এবং কি কি করা যাবে না এ বিষয়ে সম্পর্কে আপনারা ইতিমধ্যেই জেনেছেন এখন আমরা আপনাদেরকে জানিয়ে দিব চামড়া কিভাবে পুড়ে সে সম্পর্কে। দৈনন্দিন জীবনে কাজ করতে গিয়ে বিভিন্নভাবেই চামড়া পুড়ে যেতে পারে, বিশেষ করে - 

  • রান্না বান্নার সময় গরম পানি পড়ে,
  • আগুন লেগে পুড়ে যেতে পারে,
  • গরম কড়াইয়ে ছ্যাঁকা লেগে,
  • গরম তেল, গরম পানির বাষ্প লেগে,
  • হট ওয়াটার ব্যাগের পানি পড়ে পুড়ে যেতে পারে,
  • বিভিন্ন রাসায়নিক কেমিক্যালস বা অ্যাসিড দগ্ধ হয়ে পুড়তে পারে,
  • বৈদ্যুতিক শর্ট-সার্কিটের আগুনের সংস্পর্শে পুড়ে যেতে পারে,
  • কাপড় ইস্ত্রি করার সময় আয়রনের তাপে পুড়ে যেতে পারে। ইত্যাদি।

আগুনে পোড়ার ধরন

আগুনে চামড়া পুড়ে গেলে করণীয় কি এ সম্পর্কিত আর্টিকেলটির এ পর্যায়ে আমরা আপনাদেরকে জানিয়ে দেব আগুনে পোড়ার ধরন সম্পর্কে অর্থাৎ আগুনে পুড়ে গেলে পোড়া স্থানের গভীরতা বা পোড়ার ধরন অনুসারে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা একে বিভিন্নভাগে ভাগ করেছেন। যেমন - 

  • ফাস্ট ডিগ্রি বার্ন বা প্রথম পর্যায়ের পোড়া,
  • সেকেন্ড ডিগ্রী বার্ন বা দ্বিতীয় পর্যায়ের পোড়া,
  • থার্ড ডিগ্রি বার্ন বা তৃতীয় পর্যায়ের পোড়া,
  • ফোর্থ ডিগ্রী বার্ন বা চতুর্থ পর্যায়ের পোড়া।

আগুনে চামড়া পোড়ার ধরন অনুসারে এর চিকিৎসার ধারণও আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। সেজন্য আগুনে পুড়ে যাওয়া রোগীদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার সাথে সাথেই দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।

আগুনে পোড়া রোগীর জন্য সতর্কতা ও চিকিৎসা 

আগুনের চামড়া পুড়ে গেলে করণীয় কি এই শীর্ষক আলোচনাটিতে আপনারা আগুনে পোড়া রোগীর প্রাথমিক পরিচর্যা ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। এ পর্যায়ে আপনারা জানবেন পোড়া রোগীর সতর্কতা ও চিকিৎসা সম্পর্কে।

  • পোড়া ক্ষত স্থানে অনেকেই ডিম বা টুথপেস্ট ব্যবহার করে থাকেন, এতে সাময়িক আরাম হলেও পরবর্তীতে ড্রেসিং বা চিকিৎসার জন্য সমস্যায় পড়তে হয়। সুতরাং এগুলো না লাগানোই ভালো। 
  • পোড়া ক্ষতস্থানে ভেজা কাপড় বা ড্রেসিং ব্যবহার করা যাবে না এতে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  • আগুনে পুড়ে গেলে শরীর থেকে তরল পদার্থ বেরিয়ে যায়, সেই জন্য তরল পদার্থের ভারসাম্য রক্ষায় পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার স্যালাইন, ডাবের পানি ও লবণ পানি রোগীকে খেতে দিতে হবে।
  • ব্যথা উপশমকারী হালকা ঔষুধ (যেমন - নাপা, এইচ, ফার্স্ট) খেতে হবে। 
  • প্রাথমিক স্বস্তির জন্য বার্না ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।
  • যেকোনো ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ খাওয়ার বা ব্যবহার করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

উপসংহার

প্রিয় পাঠক বৃন্দ, আগুনে চামড়া পুড়ে গেলে করণীয় কি এ সম্পর্কিত আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা আগুনে পোড়া রোগীদের প্রাথমিক পরিচর্যা ও প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে তথ্যগুলো বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন। যে কারণেই হোক আগুনে পুড়ে গেলে রোগীদেরকে প্রাথমিক  পরিচর্যা ও চিকিৎসা দেওয়ার সাথে সাথেই হাসপাতালে নিতে হবে। সর্বদা সচেতন থাকুন আগুন দুর্ঘটনা থেকে নিজেকে রক্ষা করুন। আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

aksgreenit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url