হাঁসের ডিম নাকি মুরগির ডিম কোন ডিমের পুষ্টিগুণ বেশি
হাঁসের ডিম নাকি মুরগির ডিম কোন ডিমের পুষ্টিগুণ বেশি এ সম্পর্কে আজকের আর্টিকেল লেখা। বাংলাদেশ তথা বিশ্বের সব জায়গাতেই ডিম একটি পুষ্টিকর ও জনপ্রিয় খাদ্য। ডিমের মধ্যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে মুরগির ডিম ও হাঁসের ডিম। অনেকের মধ্যেই একটি প্রশ্নের উদয় হয় যে, কোন ডিম ভালো বা উপকারী বা পুষ্টিগুণ বেশি? চলুন দেখি বিজ্ঞান কি বলে?
আজকের আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা জানতে পারবেন কোন ডিমের পুষ্টিগুণ বেশি? কোন ডিম খাওয়া উচিত? শারীরিক পুষ্টির চাহিদা পূরণে কোন ডিম বেশি উপযোগী? এই সকল প্রশ্নের বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা। নিচের ব্যাখ্যা গুলো পড়লে আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন কোন ডিম আপনার খাওয়া উচিত ? হাঁসের ডিম নাকি মুরগির ডিম?
পেজ সুচিপত্র
বিশেষজ্ঞদের মতামত
বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরে প্রোটিন, পুষ্টি ও খনিজ পদার্থসহ অন্যান্য উপাদানের চাহিদা পুরনে দুই ধরনের ডিমই উপযোগী। তবে দুই ধরনের ডিম দুইটা আলাদা আলাদা প্রাণীর হওয়ার কারণে ডিম দুইটির পুষ্টিমানের ও পুষ্টিগুণের কিছুটা কম-বেশি হবে, এটাই স্বাভাবিক।
অনেকেই মুরগির ডিম পছন্দ করেন কিন্তু হাঁসের ডিম পছন্দ করেন না, আবার কেউ কেউ আছেন হাঁসের ডিম পছন্দ করেন কিন্তু মুরগির ডিম পছন্দ করেন না। চলুন জেনে নিই কোন ডিমে কি পরিমাণে পুষ্টি আছে -
এনার্জি বা খাদ্যশক্তি
হাঁসের ডিম নাকি মুরগির ডিম কোন ডিমের পুষ্টিগুণ বেশি এ শিরোনামে আমরা এখন জেনে নেব কোন ডিমে কি পরিমাণে এনার্জি বা খাদ্য শক্তি পাওয়া যায় সে সম্পর্কে। গবেষকদের মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম হাঁসের ডিমে থাকে ১৮৫ কিলো ক্যালরি এনার্জি অপরদিকে মুরগির ডিমে থাকে ১৭৩ কিলো ক্যালরি এনার্জি। মুরগির ডিমের তুলনায় হাঁসের ডিমে প্রায় ১২ কিলো ক্যালরি এনার্জি বেশি।
আরও পড়ুন ঃ লাল ডিম নাকি সাদা ডিম কোন রঙের ডিমে পুষ্টিগুণ বেশি।
ভিটামিন এ
হাঁসের ডিম নাকি মুরগির ডিম কোন ডিমের পুষ্টিগুণ বেশি এ সম্পর্কিত আলোচনার এ পর্যায়ে আমরা জেনে নিব কোন ডিমে কি পরিমাণে ভিটামিন এ রয়েছে সে সম্পর্কে। প্রতি ১০০ গ্রাম হাঁসের ডিমে ভিটামিন এ রয়েছে ২৬৯ মাইক্রগ্রাম অপরদিকে মুরগির ডিমে ভিটামিন এ রয়েছে ২৯৯ মাইক্রগ্রাম। হাঁসের ডিমের তুলনায় মুরগির ডিমে ৩০ মাইক্রগ্রাম ভিটামিন এ বেশি রয়েছে।
আরও পড়ুন ঃ ডিম ভাজি না সিদ্ধ পোচ নাকি আধা-সিদ্ধ কিভাবে খেলে বেশি উপকার।
প্রোটিন বা আমিষ কোন ডিমে বেশি
হাঁসের ডিম নাকি মুরগির ডিম কোন ডিমের পুষ্টিগুণ বেশি এ সম্পর্কিত আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করব দুই ধরনের ডিমের প্রোটিন বা আমিষের পরিমাণ কোন ডিমে বেশি সে সম্পর্কে।
প্রতি ১০০ গ্রাম হাঁসের ডিমে প্রোটিনের পরিমাণ ১৩.৫ গ্রাম অপরদিকে মুরগির ডিমে প্রোটিন থাকে ১৩.৩ গ্রাম। মুরগির ডিমের চেয়ে হাঁসের ডিমে প্রোটিনের পরিমাণ কিছুটা বেশি থাকে।
ফ্যাট বা চর্বি
হাঁসের ডিম নাকি মুরগির ডিম কোন ডিমের পুষ্টিগুণ বেশি এ আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করব কোন ডিমে কি পরিমাণে ফ্যাট বা চর্বি থাকে সে সম্পর্কে। প্রতি ১০০ গ্রাম হাঁসের ডিমে ফ্যাট বা চর্বি থাকে ১৩.৭ গ্রাম এবং মুরগির ডিম থাকে ১৩.৩ গ্রাম। মুরগির ডিমের চেয়ে হাঁসের ডিমে ফ্যাটের পরিমাণ কিছুটা বেশি থাকে।
আরও পড়ুন ঃ ত্বক বা স্কিন কালো হয়ে যাওয়ার ১০ কারণ।
খনিজ পদার্থ বা মিনারেলস
হাঁসের ডিম নাকি মুরগির ডিম কোন ডিমের পুষ্টিগুণ বেশি এ সম্পর্কিত আলোচনার এ পর্যায়ে আমরা আলোচনা করব কোন ধরনের ডিমে কি পরিমাণে খনিজ পদার্থ বা মিনারেলস থাকে সে সম্পর্কে। প্রতি ১০০ গ্রাম হাঁসের ডিমে ক্যালসিয়াম থাকে ৭০ মিলিগ্রাম, আয়রণ থাকে ৩.০ মিলিগ্রাম। অপরদিকে মুরগির ডিমে ক্যালসিয়াম রয়েছে ৬০ মিলিগ্রাম ও আয়রণ রয়েছে ২.১ মিলিগ্রাম। এছাড়াও রয়েছে জিংক, সেলেনিয়াম ও ফসফরাসের মতো খনিজ উপাদান।
আরও পড়ুন ঃ গ্রীন টি খাওয়ার ১২টি উপকারিতা অপকারিতা পুষ্টিগুণ ও সতর্কতা।
স্যাচুরেটেড ফ্যাট
হাঁসের ডিম নাকি মুরগির ডিম কোন ডিমের পুষ্টিগুণ বেশি এ আলোচনায় আমরা এখন জেনে নেব কোন ডিমে স্যাসুররেটেড ফ্যটের পরিমাণ বেশি সে সম্পর্কে। মুরগির ডিমের তুলনায় হাঁসের ডিমে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি। প্রতি ১০০ গ্রাম মুরগির ডিমে স্যাচুয়েটেড ফ্যাট রয়েছে ৩.১ গ্রাম। অপরদিকে হাঁসের ডিমে রয়েছে প্রায় ৪.৮ গ্রাম যা মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট হিসেবে পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন ঃ বদহজম বা পেট ফাঁপা দূর করার সহজ ১৪ টি ঘরোয়া উপায়।
অন্যান্য পুষ্টি উপাদান
মুরগির ডিমের তুলনায় হাঁসের ডিম প্রায় দেড় গুণ (৫০ শতাংশ) বড়। হাঁসের ডিম আকারে বড় হওয়ার কারণে প্রায় সব ধরনের পুষ্টি উপাদান এই ডিমে বেশি পাওয়া যায। ফলে হাঁসের ডিম খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
বিশেষ করে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন ই, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন এ, আয়রণ, অ্যালানিন, এ্যাসপার্টিক এসিড, লিউসিন, লাইসিন, সেরিন, গ্লাইসিন, প্রোলিন ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান।
প্রোটিন বেশি চাইলে
হাঁসের ডিম নাকি মুরগির ডিম কোন ডিমের পুষ্টিগুণ বেশি এ আলোচনার এ পর্যায়ে আমরা আলোচনা করব প্রোটিন বেশি চাইলে কোন ডিম পছন্দ করা উচিত সে সম্পর্কে। প্রোটিন বেশি চাইলে হাঁসের ডিম পছন্দ করা উচিত। কারণ, এ ডিমে রয়েছে মুরগির ডিমের তুলনায় বেশি পরিমাণে ক্যালরি, প্রোটিন ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। যারা ভারী কাজ করেন, পেশির গঠন মজবুত করতে চান বা যাদের পেশি ক্ষয় বেশি হয় তাদের জন্য হাঁসের ডিম শ্রেয়।
ওজন কমাতে চাইলে
হাঁসের ডিম নাকি মুরগির ডিম কোন ডিমের পুষ্টিগুণ বেশি এ আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করব ওজন কমাতে চাইলে কোন ডিম খাওয়া উচিত। ওজন কমাতে চাইলে মুরগির ডিম পছন্দ করা উচিত। কারণ, এতে রয়েছে কম পরিমাণে ক্যালরি ও চর্বি যেগুলো ওজন নিয়ন্ত্রণ সহায়তা করে।
বেশি এনার্জির প্রয়োজন হলে
বেশি এনার্জির প্রয়োজন হলে হাঁসের ডিম পছন্দ করতে পারেন। এতে রয়েছে মুরগির ডিমের তুলনায় বেশি পরিমাণে ক্যালরি, প্রোটিন, ফ্যাট, খনিজ ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। যেগুলো অতিরিক্ত পরিশ্রম করা লোকজনের জন্য অতিরিক্ত শক্তির যোগান দিতে পারে।
কোলেস্টেরলের ঝুঁকি থাকলে
পুষ্টিবিদদের মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম হাঁসের ডিমে কোলেস্টেরল পাওয়া যায় ৮৮৪ মিলিগ্রাম অপরদিকে মুরগির ডিম আকারে ছোট হওয়ার কারণে কোলেস্টরেলের পরিমাণও কম যা মাত্র ৪২৫ মিলিগ্রাম। সুতরাং যাদের রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি ও হৃদরোগের সমস্যা বা ঝুঁকি আছে তাদের হাঁসের ডিম না খেয়ে মুরগির ডিম পছন্দ করা উচিত (ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী)।
এলার্জির সমস্যা বা প্রবণতা
এলার্জির সমস্যা বা প্রবণতা থাকলে পুষ্টিগুণ থাকা সত্ত্বেও ডিম পরিহার করা উচিত। যাদের যে ডিমে এলার্জি তাদের সেই ডিম পরিহার করা উচিত। যেমন - কারো কারো হাঁসের ডিমে এলার্জি হতে পারে আবার কারো কারো মুরগির ডিমে অ্যালার্জি হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে যার যে ডিমে এনার্জি সে সেই ডিম পরিহার করুণ।
গর্ভবতী নারীদের জন্য
গর্ভবতী নারীদের পুষ্টির চাহিদা পূরণের জন্য হাঁসের ডিম বা মুরগির ডিম একটি অতুলনীয় খাদ্য। পুষ্টির চাহিদা পূরণের জন্য আপনি যেকোন ডিম খেতে পারেন। তবে গর্ভকালীন সময়ে কোলেস্টেরল যদি বেশি থাকে, তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে পরিমাণ মতো ডিম খেতে পারেন।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক বৃন্দ, আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা এতক্ষণে জেনে গেছেন মুরগির ডিম ও হাঁসের ডিম দুটোই পুষ্টিকর। তবে পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে মুরগির ডিমের চেয়ে হাঁসের ডিম বেশি পুষ্টিকর ও উপকারী। মুরগির ডিম হাঁসের ডিমের তুলনায় বেশি প্রচলিত হলেও পুষ্টিগুণে এটি কম। ডিম নিয়ে কোন বিতর্ক নয়। দেহে প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও শক্তির যোগান দিতে নিয়মিত নিয়ম মেনে ডিম খাওয়া উচিত।
আশা করি, আজকের আর্টিকেলটি পড়ে ডিমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে সকল বিষয়গুলো বিস্তারিত ভাবে জানতে পেরেছেন। আপনার স্বাস্থ্য ও ডিমের পুষ্টিগুণ বিবেচনায় হাঁসের ডিম নাকি মুরগির ডিম আপনার খাওয়া উচিত সেটি বেছে নিতে সক্ষম হবেন বলে আমি মনে করি। নিয়মিত ডিম খাবেন সুস্বাস্থ্য ভালো থাকবেন। আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
তথ্য ঃ ইউএসএএফএ।
aksgreenit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url