ট্যাবলেটের মাঝখানে স্কোরিং বা দাগ থাকে কেন জেনে নিন
ট্যাবলেটের মাঝখানে স্কোরিং বা দাগ থাকে কেন এর সঠিক কারণ জানার জন্য আজকের আর্টিকেলটি লেখা। জ্বর, ব্যথা, মানসিক সমস্যা বা শারীরিক সমস্যার বিভিন্ন ঔষধে বিশেষ করে ট্যাবলেটের মাঝখান বরাবর দু'ভাগে ভাগ করে অথবা আড়াআড়ি ভাবে চার ভাগে বিভক্ত করে দাগ টানা থাকে বা স্কোরিং করা থাকে। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন কেন এই দাগ টানা বা স্কোরিং করা থাকে?
আজকের আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা জানতে পারবেন ট্যাবলেটের গায়ে কেন মাঝ বরাবর দুই ভাগে বিভক্ত করে দাগ থাকে অথবা চার ভাগে ভাগ করে আড়াআড়ি দুইটি দাগ থাকে আবার কোন কোন ওষুধের পাতায় দুইটি ঔষধের মাঝখানে বেশ ফাঁকা থাকে এ সম্পর্কিত সঠিক বৈজ্ঞানিক ও ডাক্তারি ব্যাখ্যা। চলুন জেনে নিই সঠিক কারণগুলো।
পেজ সুচিপত্র
ট্যাবলেটের মাঝখানে স্কোরিং বা দাগ
ট্যাবলেটের মাঝখানে স্কোরিং বা দাগ থাকে কেন এ সম্পর্কিত আলোচনার প্রথমেই জেনে নেওয়া দরকার স্কোরিং লাইন বা দাগ কাকে বলে সে সম্পর্কে। ট্যাবলেটের গায়ে মাঝখান বরাবর একটি অথবা চার ভাগে বিভক্ত করা যায় এমন আড়াআড়ি ২টি দাগ দেওয়া থাকে। এই দাগগুলোকেই মূলত স্কোরিং লাইন বলা হয়। ঔষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এটি রাখে মূলত ট্যাবলেটগুলো যেন চিকিৎসার প্রয়োজনে সমান দুই ভাগে অথবা সমান চার ভাগে ভাগ করার জন্য ভাঙ্গা যায় সেই উদ্দেশ্যে।
ঔষধের মাত্রার অমিল
ট্যাবলেটের মাঝখানে স্কোরিং বা দাগ থাকে কেন এ সম্পর্কিত আলোচনার এ পর্যায়ে আমরা জেনে নেব ঔষধের মাত্রার গড়মিল সম্পর্কে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা রোগীর শরীর-স্বাস্থ্য, বয়স ও ওজনের উপর ভিত্তি করে ঔষধের মাত্রা নির্ধারণ করে দেন। অনেক সময় দেখা যায়, ডাক্তার স্যারেরা যে মাত্রায় ঔষধ খাওয়ার জন্য ব্যবস্থাপত্রে উল্লেখ করে দেন কিন্তু বাস্তবে সেটি অমিল অর্থাৎ তার চেয়ে বেশি মাত্রার ঔষধ পাওয়া যায়। এই সকল ক্ষেত্রে ঔষধের মাত্রা ঠিক রাখার জন্য ঔষধ ভাঙ্গার প্রয়োজন হয়।
আরও পড়ুন ঃ টাফনিনের কাজ খাওয়ার নিয়ম ও সতর্কতা।
ধরুন কাউকে ২৫০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট খেতে বলা হলো কিন্তু বাজারে ঔ ঔষধের ৫০০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট পাওয়া যায়। সেই ক্ষেত্রে চিকিৎসার স্বার্থে রুগীর প্রয়োজনে ট্যাবলেটটি অর্ধেক করা জরুরী। অসমান ভাগে বিভক্ত হলে ঔষধের মাত্রা শরীরে কম-বেশি হয়ে যাবে। সমান দুই ভাগে যেন ওষুধটি ভেঙ্গে রোগীকে খাওয়ানো যায় সে জন্য ট্যাবলেটের উপরে স্কোরিং লাইন বা দাগ টানা থাকে।
চিকিৎসকের মতামত
ট্যাবলেটের মাঝখানে স্কোরিং বা দাগ থাকে কেন এ সম্পর্কিত আলোচনার এ পর্যায়ে আমরা জেনে নিব বিভিন্ন চিকিৎসকের মতামত সম্পর্কে। চিকিৎসকদের মতামত থেকে জানা যায়, সমান ভাগে ভাগ করার জন্য ট্যাবলেটের উপরে এই স্কোরিং লাইন।
আরও পড়ুন ঃ মোনাস ১০ এর কাজ খাওয়ার নিয়ম ও সতর্কতা।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, অনেক সময় লিভার বা কিডনির সমস্যা রয়েছে, এমন রোগীর ক্ষেত্রে বেশ কিছু ঔষধের মাত্রা কমানোর প্রয়োজন পড়ে। তখন ঔষধ ভেঙ্গে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। মূলত ট্যাবলেটগুলো সহজে ভেঙ্গে সমান ভাগে ভাগ করা যায় এই উদ্দেশ্যেই ট্যাবলেটের উপরে এ ধরনের দাগ দেওয়া হয়।
শিশু রোগীদের ক্ষেত্রে
ট্যাবলেটের মাঝখানে স্কোরিং বা দাগ থাকে কেন এ সম্পর্কিত আলোচনার এ পর্যায়ে আপনাদেরকে জানাবো শিশু রোগীদের ক্ষেত্রে ঔষধ খাওয়ানোর জটিলতা সম্পর্কে।
অনেক সময় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনে দেখা যায়, এক-দুমাস বয়সের বাচ্চাদের ফেনবারবিটন (বারবিট ৩০) জাতীয় ঔষধ চার ভাগের এক ভাগ বা আট ভাগের এক ভাগ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। অর্থাৎ এই ঔষধগুলো কম মাত্রায় বাচ্চাদের খাওয়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। এই ট্যাবলেটগুলো যেন সহজেই ভেঙ্গে বাচ্চাদেরকে কম মাত্রায় খাওয়ানো যায় সেজন্যই ট্যাবলেটে স্কোরিং লাইন বা দাগ টানা থাকে।
ট্যাবলেটের মাঝখানে স্কোরিং বা দাগের যৌক্তিকতা
ট্যাবলেটের মাঝখানে স্কোরিং বা দাগ থাকে কেন এ সম্পর্কিত আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করব ট্যাবলেটের উপরে স্কোরিং লাইন বা দাগের যৌক্তিকতা সম্পর্কে। বিভিন্ন ডাক্তারের মতে, এই স্কোরিং লাইন বা দাগের যৌক্তিকতা ক্রমশাই কমছে।
আরও পড়ুন ঃ ফেক্সো ১২০ এর কাজ খাওয়ার নিয়ম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দাম ও সর্ততা।
তাঁরা আরো বলেন, এ ধরনের ভাঙ্গাভাঙ্গির ঝামেলা এড়াতে ঔষধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন ঔষধ বিভিন্ন মাত্রায় প্রস্তুত করে বাজারে নিয়ে আসছে। যেমন - এনজিওলাইটিক বা থাইরয়েডের ঔষধ আকারে বেশ ছোট। সেগুলো ভাঙ্গাভাঙ্গি করা সহজ নয়। ফলে বিভিন্ন মাত্রায় সে ঔষধগুলো তৈরি করা হচ্ছে।
ঔষধের গুনাগুন বজায় থাকে
ট্যাবলেটের মাঝখানে স্কোরিং বা দাগ থাকে কেন এ সম্পর্কিত আলোচনার এ পর্যায়ে আমরা আলোচনা করব ঔষধ বা ট্যাবলেট গুড়া করলে বা ভাঙ্গলে গুনাগুন ঠিক থাকে কিনা সে সম্পর্কে।
আমরা অসুস্থ হলেই মূলত ঔষধ সেবন করি। আর সেই ঔষধটি হতে হবে গুনাগুন ঠিক থাকে এমন মানের। যদি ঔষধ গুড়া করা হয় তাহলে গুণগত মান ঠিক নাও থাকতে পারে। ঔষধ গুড়া বা চূর্ণ না করাই ভালো। চিকিৎসার প্রয়োজনে রোগীর স্বার্থে ঔষধ কম মাত্রায় খাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে ট্যাবলেটে স্কোরিং লাইন বা দাগ থাকা জরুরী। এই দাগ বরাবর ট্যাবলেট ভাঙলে সমান ভাগে বিভক্ত হয় ও গুণগত মান ঠিক থাকে।
স্ট্রিপ বা পাতায় ফাঁকা জায়গা
ট্যাবলেটের মাঝখানে স্কোরিং বা দাগ থাকে কেন এই শিরোনামটি আলোচনার এ পর্যায়ে আমরা আপনাদেরকে জানিয়ে দেব স্ট্রিপ বা পাতায় ঔষধের মাঝখানে কিছু ফাঁকা জায়গা থাকে কেন সে সম্পর্কে। সুনির্দিষ্ট কিছু কারণেই ঔষধের পাতায় প্রতিটি ঔষধের মাঝে কিছু পরিমাণ নির্দিষ্ট জায়গা ফাঁকা রেখে ঔষধ বসানো থাকে। কিছু কিছু ঔষধ আছে যেগুলো কেউ যদি পুরো পাতা না কিনে বা রোগিদের প্রয়োজনীয়তা অনুসারে নির্দিষ্ট সংখ্যক পরিমাণ কেটে বিক্রি করা যায়। এজন্যই স্ট্রিপ বা পাতায় ঔষধের মাঝে ফাঁকা রেখে প্রস্তুত করা হয়।
আরও পড়ুন ঃ ভিটামিন ই ক্যাপসুল মুখে ব্যবহারের নিয়ম।
অনেক সময় দেখা যায় একটি বড় পাতায় একটি ঔষধ রেখে বাকিগুলো ফাঁকা রাখা হয়। এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, কেউ যদি কোন ঔষধ দূর-দূরান্তে স্থানান্তর করতে চান সেই ক্ষেত্রে ঔষধ যাতে নষ্ট না হয়, সেজন্যই এমন ব্যবস্থা করে ঔষধ প্রস্তুত করা হয়। অর্থাৎ ঔষধের মান ঠিক রাখার জন্যই এমনটি করা হয়।
উপসংহার
চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে বিভিন্ন রোগের জন্য বিভিন্ন মাত্রার ঔষধ আবিষ্কৃত হচ্ছে এবং ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সেই মতে ঔষধ তৈরি করছে। ফলে ঔষধ ভেঙে খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনেকটাই কমে গেছে। এই ঔষধগুলো রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শে খেতে হয়। চিকিৎসকরা ক্লিনিক্যাল ডায়াগনোসিসের মাধ্যমে এবং রোগীর শারীরিক অবস্থা, ওজন ও বয়সের উপর ভিত্তি করে সঠিক মাত্রা ও ডোজ নির্ধারণ করে থাকেন। সেই ক্ষেত্রে বাজারে যে মাত্রার ঔষধ প্রচলিত আছে তার চেয়ে কম বা বেশি মাত্রার ঔষধ সেবন করতে হতে পারে। এই সকল ক্ষেত্রেই কেবল ঔষধ ভেঙ্গে খাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে আর তখনই প্রয়োজন হয় ঔষধ তথা ট্যাবলেটের উপর স্কোরিং লাইন বা দাগ।
প্রিয় পাঠক বৃন্দ, ট্যাবলেটের মাঝখানে স্কোরিং বা দাগ থাকে কেন এ সম্পর্কিত আজকের আর্টিকেলটি পড়ে ট্যাবলেটের উপরে স্কোরিং লাইন বা দাগ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন ও উপকৃত হয়েছেন বলে আমার বিশ্বাস। এই লেখাগুলো যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে প্রিয়জনদের মাঝে শেয়ার করে দিতে ভুলবেন না। চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে আমাদের সাথেই থাকুন আর বিদায় বেলা একটি কথা বলে যাই "রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ খাবেন না"। ঔষধ গুড়া বা চূর্ণ করা উচিত নয়। প্রয়োজনে ঔষধ ভেঙ্গে খাওয়া যেতে পারে। ধন্যবাদ।
aksgreenit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url