গর্ভাবস্থায় যে ১২ ফল খাবেন
গর্ভাবস্থায় যে ১২ ফল খাবেন এ সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলটি লেখা। গর্ভকালীন সময় একজন নারীর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অন্যতম সময়। এই সময় গর্ভকালীন একজন নারীর প্রতি অন্যান্য সবারই আচরণ থাকে একটু অন্যরকম। এই সময় ইচ্ছা করলেই একজন নারী সব খাবার-দাবার যেমন খেতে পারেন না তেমনি ইচ্ছামত চলাফেরাও করতে পারেন না। সবকিছুতেই যেন একটা সীমাবদ্ধতার মধ্যে থাকতে হয় গর্ভের সন্তানের ভালো দিক লক্ষ্য রেখে।
আজকের আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা জানতে পারবেন বিভিন্ন পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে গর্ভকালীন সময়ে যেসব ফলমূল খেলে গর্ভবতী মা ও গর্ভের সন্তানের উপকার হয় সেই সব ফলগুলো সম্পর্কে। একজন গর্ভবতী মা কোন কিছু খাওয়ার আগে চিন্তা করেন এটি খাওয়া নিরাপদ কিনা বা বাচ্চার জন্য উপকারী কিনা সে সম্পর্কে। নিচের দিকে পড়লেই বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন। চলুন জেনে নেই গর্ভাবস্থায় কোন ফলগুলো খাওয়া বেশি উপকারী।
পেজ সুচিপত্র
গর্ভাবস্থায় যে ১২ ফল খাবেন তার বর্ণনা
গর্ভাবস্থায় নারী জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আনন্দঘন ও সেনসিটিভ সময়। এই অবস্থায় একজন গর্ভবতীর সেই সকল ফলগুলো খাওয়া দরকার, যে ফলগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ও অন্যান্য উপাদান এবং বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে, গর্বাভের বাচ্চা ও গর্ভবতী মায়ের জন্য। সেরকম কিছু ফলের বিবরণ নিম্নে তুলে ধরা হলো -
১.গর্ভাবস্থায় কলা কেন খাবেন
আরও পড়ুন ঃ গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মা ও গর্ভে শিশুর ক্ষতি করে এমন ১০ পানীয় এড়িয়ে চলুন।
২.গর্ভাবস্থায় পেয়ারার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় যে ১২ ফল খাবেন তার মধ্যে একটি অন্যতম ফল হল পেয়ারা। পেয়ারা পুষ্টিগণে ভরপুর একটি ফল। এই ফল খেলে গর্ভবতী মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে ও গর্ভের সন্তান ভালো থাকে। এছাড়াও এ ফলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়াম যেগুলো গর্ভবতী মায়ের বিভিন্ন দূর করে এবং গর্ভের বাচ্চার হাড়ের গঠন। পেয়ারা খেলে অনেক গর্ভবতী মায়ের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
আরও পড়ুন ঃ স্ট্রবেরি পুষ্টিগণ ১৪ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম।
৩.গর্ভাবস্থায় ব্লুবেরি খেলে যে উপকার পাবেন
গর্ভাবস্থায় যে ১২ ফল খাবেন তার মধ্যে আরেকটি চমৎকার ফল হলো ব্লুবেরি। এই ফলটি এন্টিঅক্সিডেন্টে, জিংক, আয়রণ ও অন্যান্য মিনারেলসে পরিপূর্ণ। এই ফলটি খেলে গর্ভবতী মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।পাশাপাশি গর্ভের শিশুর মস্তিষ্কের গঠনে ও বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটাতে সহায়তা করে। প্রতিদিন পরিমাণ মতো ব্লুবেরি গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের খাওয়া উচিত।
৪.গর্ভাবস্থায় আপিল খাওয়া জরুরি কেন
গর্ভাবস্থায় যে ১২ ফল খাবেন তার মধ্যে একটি অন্যতম ফল হলো আপেল। এই আপেল রয়েছে বিভিন্ন ধরনের এন্টিঅক্সিডেন্ট ও মিনারেলস। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আয়রন। গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিন কমপক্ষে একটি করে আপিল খাওয়া উচিত।
আপেলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন। যে আয়রনের কারণে গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি পূরণ করতে সহায়তা করে। গর্ভাবস্থায় আয়রনের ঘাটতি হলে গর্ভবতী মায়ের ও গর্ভের বাচ্চার রক্তশূন্যতা দেখাতে পারে।
৫.গর্ভাবস্থায় রক্তস্বল্পতা দূর করে কালোজাম
গর্ভাবস্থায় যে ফলগুলো খাবেন তার মধ্যে অন্যতম একটি ফল হলো কালোজাম। কালোজামগুলোতে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান, এন্টিঅক্সিডেন্ট, মিনারেল ও আয়রন। এই কালো জাম গুলো খেলে গর্ভবতী মায়ের রক্ত সল্পতা দূর করে বাচ্চার শরীর গঠনে সহায়তা করে প্রতিদিন নিয়মিত পরিমাণে কালোজাম খেলে বাচ্চার মেধার বিকাশ ঘটে।
আরও পড়ুন ঃ আমের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা।
৬.গর্ভাবস্থায় ফ্লু জাতীয় রোগ দূর করে কমলা লেবু
গর্ভাবস্থায় যে ১২ ফল খাবেন তার মধ্যে একটি অন্যতম ফল হল কমলা লেবু। কমলা এই ফলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার, ফলিক এসিড ও ভিটামিন সি। যেগুলো গর্ভবতী মায়ের বিভিন্ন উপকারের পাশাপাশি গর্ভস্থ ভ্রূণের মস্তিষ্ক ও মেরুদন্ড গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রতিদিন নিয়মিত ভাবে একজন গর্ভবতী মায়ের পরিমিত পরিমাণে কমলা লেবু খাওয়া উচিত। কমলালেবুতে বিদ্যমান ভিটামিন সি গুলো গর্ভবতী মায়ের ফ্লু জাতীয় রোগ নিরাময়ে সহায়তা করে। যার ফলে গর্ভের বাচ্চাও ভালো থাকে।
আরও পড়ুন ঃ গর্ভাবস্থায় তৃতীয় তিন মাসে করণীয় বর্জনীয় নির্দেশিকা।
৭.গর্ভাবস্থায় স্ট্রবেরি খেলে রক্ত স্বল্পতা দূর হয়
গর্ভাবস্থায় যে ১২ ফল খাবেন এর মধ্যে একটি অন্যতম ফল হলো স্ট্রবেরি। স্ট্রবেরি ফলগুলো বিভিন্ন ভিটামিন, মিনারেল, এ্যন্ট্রিঅক্সিডেন্ট, জিংক ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ। এই ফলগুলো খেলে গর্ভবতী মায়ের বিভিন্ন উপকার করার পাশাপাশি গর্ভের বাচ্চার বিভিন্ন ধরনের শারীরিক গঠনে সহায়তা করে। এই ফলগুলো যথেষ্ট আয়রন সমৃদ্ধ ফলে রক্তস্বল্পতা দূর করে।
আরও পড়ুন ঃ বাচ্চার ওজন কত হলে সিজার করা যায় ও নরমাল ডেলিভারির গুরুত্ব।
৮.গর্ভাবস্থায় ভুট্টা খেলে বাচ্চার বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটে
গর্ভাবস্থায় যে ১২ ফল খাবেন তার মধ্যে একটি অন্যতম ফল জাতীয় খাবার হলো ভুট্টা। ভুট্টাতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম, আয়রন, বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান ও মিনারেলস, এর মধ্যে একটি অন্যতম খনিজ উপাদান হলে আয়োডিন।
গর্ভাবস্থায় আয়ডিনযুক্ত খাবার বাচ্চা বুদ্ধি বিকাশের জন্য খুবই জরুরী। আয়োডিনযুক্ত খাবার খেলে বাচ্চার বুদ্ধিমত্তা বিকাশে সহায়তা করে। এছাড়োও আয়োডিন যুক্ত খাবার তে মাছ, দুধ, ডিম, কলিজা খেতে পারেন।
৯.গর্ভাবস্থায় খেজুর ও কিচমিচ বাড়তি ক্যালরি যোগায়
খেজুর ও কিচমিচ গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের বাড়তি ক্যালরির যোগান দিতে সহায়তা করে থাকে। এ ফলগুলোতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালরি ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। যেগুলো গর্ভবতী মাকে বাড়তি পুষ্টি ও ক্যালরি যোগান দিয়ে গর্ভবতী মাকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি বাচ্চার বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। গর্ভবতী মা ও বাচ্চা সুস্থ গঠনের জন্য প্রতিদিন খাদ্য তালিকা এ ধরনের ফলগুলো রাখতে হবে।
১০.গর্ভাবস্থায় বাদাম খেলে বাচ্চার দৈনিক গঠন ভালো হয়
গর্ভাবস্থায় যেসব ফল খাবেন তার তালিকায় রাখতে পারেন বাদাম, কাজু বাদাম, চীনা বাদাম ও মটরশুঁটির মতো ফল। এই ফলগুলো প্রচুর পরিমাণে কপার, জিংক, ফলিক এসিড ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকে। যেগুলো বাচ্চার স্নায়ুতন্ত্রের গঠন, মস্তিষ্কের গঠন ও হাড়ের গঠনে সহায়তা করে। গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের ও গর্ভের বাচ্চার সুস্থ বিকাশের জন্য এই ফলগুলো খাদ্য তালিকা রাখা জরুরি।
১১.গর্ভাবস্থায় লেবু ও জাম্বুরা খেলে রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে
গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের পর্যাপ্ত পরিমাণে লেবু ও জাম্বুরা খাওয়া উচিত এই ফলগুলোতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি। ভিটামিন সিম গর্ভবতী মায়ের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে। গর্ভের সন্তানের মাড়ি, দাঁত ও হাড়ের গঠনে প্রতিদিন একজন গর্ভবতী মাকে কমপক্ষে ৮৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি খাওয়া প্রয়োজন। এই ভিটামিন সি এর ভালো উৎস হল টাটকা লেবু, টমেটো, জাম্বুরা ও সাইট্রাস জাতীয় ফল।
১২.গর্ভাবস্থায় ডালিম খেলে অধিক পুষ্টি পায়
গর্ভকালীন সময়ের যে ফলগুলো খাওয়া দরকার তার মধ্যে একটি অন্যতম ফল হল ডালিম বা আনার বা বেদেনা। এই ফলগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের পাশাপাশি আয়রন, জিংক, ফলিক এসিড ও ক্যালসিয়াম রয়েছে। যেগুলো গর্ভবতী মায়ের রক্তস্বল্পতা দূর করে ও গর্ভের বাচ্চার শারীরিক বিভিন্ন গঠনে সহায়তা করে।
বি ঃ দ্র ঃ আনারস, কাঁচা পেঁপে, কামরাঙ্গা, অতিরিক্ত আঙ্গুর এ ধরনের ফলগুলো অনেকেই খেতে নিষেধ করেন। যদিও চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর তেমন কোন তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
কথায় বলে যেখানেই বাঁধা পাবেন সেখানেই বিকল্প খুঁজবেন। সেজন্য এ ফলগুলো খাওয়ার আগে একটু ভেবেচিন্তে খেতে হবে। যদি কোন সমস্যা মনে করেন, তাহলে না খাওয়াই ভালো।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক বৃন্দ, গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিনযুক্ত খাবার না খেলে গর্ভের সন্তান ত্রুটিযুক্ত হতে পারে। বিশেষ করে জিঙ্ক, আয়রন, ক্যালসিয়াম ও ফলিক এসিডের অভাব হলে ত্রুটিযুক্ত বাচ্চা জন্ম নিতে পারে।গর্ভবতী মাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিনযুক্ত খাবার দিয়ে গর্ভবতী মাকে ও গর্ভের বাচ্চা সুস্থ রাখার চেষ্টা করুন। এতে করে পারিবারিক সকলের দায়িত্ব পালন হবে পাশাপাশি সুস্থ, সবল, সুন্দর ও ত্রুটিমুক্ত বাচ্চা জন্ম নিবে।
আশা করি, গর্ভাবস্থায় কি ধরনের ফল খাবেন এ সম্পর্কিত আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন ও উপকৃত হয়েছেন। এ তথ্যগুলো অন্যান্য গর্ভবতী মায়েদেরকে জানার জন্য শেয়ার করে দিতে ভুলবেন না প্লিজ। আর এ সম্পর্কে কোন জিজ্ঞাসা থাকলে কমেন্টস বক্সে জানাতে পারেন। এ ধরনের আরও আপডেট তথ্য পাওয়ার জন্য চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে আমাদের সাথেই থাকুন। আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
aksgreenit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url