গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মা ও গর্ভে শিশুর ক্ষতি করে এমন ১০ পানীয় এড়িয়ে চলুন
গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মা ও গর্ভে শিশুর ক্ষতি করে এমন ১০ পানীয় এড়িয়ে চলুন এ সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলটি লেখা। প্রত্যেক নারীর জীবনেই গর্ভাবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আনন্দদায়ক ও সেনসেটিভ সময়। এই সময়ে গর্ভবতী মা ও গর্ভের সন্তানের ভালোর জন্য অনেক বিধি-নিষেধ মেনে চলতে হয়। খাদ্য-খানার ব্যাপারেও বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করা হয়ে থাকে।
ছবিটি সংগৃত
গর্ভকালীন সময়ে অনেক পছন্দের খাবারও গর্ভবতী মা দেরকে খেতে নিষেধ করা হয়। এই বিধি-নিষেধগুলো বিভিন্ন পানীয় বা জুসের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য হয়। অনেক পানীয় আছে যেগুলো গর্ভাবস্থায় খেলে গর্ভবতী মায়ের ও গর্ভের শিশুর ক্ষতি করে। এই পানীয়গুলো এড়িয়ে চলাই উত্তম। চলুন জেনে নেয়া যাক কি কি সেই ক্ষতিকর পানীয়।
পেজ সুচিপত্র
১.গর্ভে শিশুর ক্ষতি করে পাস্তুরাইজড নয় এমন দুধ
গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মা ও গর্ভে শিশুর ক্ষতি করে এমন ১০ পানীয় এড়িয়ে চলুন এ সম্পর্কিত আলোচনার এ পর্যায়ে আমরা জেনে নেব পাঁস্তুরাইজড নয় এমন দুধ পান করলে গর্ভাবস্থায় কি ধরনের ক্ষতি হয় সে সম্পর্কে। ক্যালসিয়ামের সবচেয়ে ভালো উৎস হলো দুধ। একজন গর্ভবতী মায়ের ও গর্ভের শিশুর সুস্থতার জন্য ক্যালসিয়াম অপরিহার্য।
ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে গর্ভবতী মাকে দুধ পান করার জন্য বলা হয়। মনে রাখতে হবে এই দুধ অবশ্যই পাস্তুরাইজড হতে হবে। পাস্তরাইজ নয় এমন দুধে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। যা গর্ভবতী মা ও গর্ভের বাচ্চার বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে। শিশুকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষার জন্য ননপাস্তরাইজড দুধ পান করা যাবে না।
২.গর্ভে শিশুর ক্ষতি করে বাজারজাত ফলের রস
গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মা ও গর্ভে শিশুর ক্ষতি করে এমন ১০ পানীয় এড়িয়ে চলুন এই শিরোনামটি আলোচনার এ পর্যায়ে আমরা আলোচনা করব বাজারজাত ফলের রস বা জুস খেলে গর্ভবতী মায়ের ও গর্ভের শিশুর কি ধরনের ক্ষতি হয় সে সম্পর্কে। টাটকা ফলের রস বা জুস গর্ভবতী মায়ের ও গর্ভের বাচ্চার জন্য অত্যন্ত উপকারী।
আরও পড়ুন ঃ যে ১৪ রকম পানীয় বা জুস গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য খুব উপকারী।
বাজারজাত ফলের রসে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল বা প্রিজারভেটিভ থাকতে পারে। যেগুলো গর্ভবতী মা ও গর্ভের বাচ্চার জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে। এমনকি গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে বাজারজাত ফলের জুস খেলে গর্ভের বাচ্চা অ্যবর্শন হয়ে যেতে পারে। টাটকা ফল দিয়ে বাড়িতে জুস তৈরি করে খেতে হবে। যা গর্ভবতী মা ও বাচ্চা উভয়ের জন্য নিরাপদ ও উপকারী।
৩.পেঁপের জুস গর্ভাবস্থায় ক্ষতি করে
গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মা ও গর্ভে শিশুর ক্ষতি করে এমন ১০ পানীয় এড়িয়ে চলুন এ সম্পর্কিত আলোচনায় এখন আমরা আপনাদেরকে জানিয়ে দেবো পেঁপের জুস খেলে গর্ভবতী মা ও গর্ভের শিশুর কি ধরনের ক্ষতি হয় সে সম্পর্কে। গর্ভবতী অবস্থায় পেঁপে বা পেঁপের জুস ক্ষতিকর।
আরও পড়ুন ঃ গর্ভাবস্থায় যে ১২ ফল খাবেন।
বিশেষ করে গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে এই জুস খাওয়া উচিত নয়। কাঁচা পেঁপেতে প্রাইম্যান নামক একটি রাসায়নিক উপাদান থাকে যা জরায়ুর সংকোচনে সহায়তা করে, যার ফলে গর্ভপাত হয়ে যেতে পারে। গর্ভে বাচ্চার স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে বাধাগ্রস্ত করে।
৪.কফি ও ক্যাফিন গর্ভে শিশুর করে
গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মা ও গর্ভে শিশুর ক্ষতি করে এমন ১০ পানীয় এড়িয়ে চলুন এ সম্পর্কিত আলোচনার এ পর্যায়ে আমরা আলোচনা করব কফি খেলে গর্ভবতী মা ও গর্ভের শিশুর যে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে সে সম্পর্কে। কফিতে থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যাফিন, যা গর্ভের শিশুর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এমনকি গর্ভপাত হয়ে যেতে পারে।
যুক্তরাজ্যের খাদ্য মান সংস্থার সুপারিশ মতে, যে সমস্ত গর্ভবতী মহিলারা উচ্চমাত্রায় কফি ও ক্যাফিন গ্রহণ করে তাদের গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেক গুনে বেড়ে যায়। এছাড়াও আরো অনেক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। যেমন - লো বার্থ ওয়েট এর বাচ্চা প্রসব বা মৃত বাচ্চা প্রসব হতে পারে। সে জন্য গর্ভবতী মাকে কফি ও ক্যাফিন গ্রহণ থেকে বিরত থাকা উচিত।
৫.গর্ভবতী মা ও গর্ভে শিশুর ক্ষতি করে হুইটগ্রাস জুস
গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মা ও গর্ভে শিশুর ক্ষতি করে এমন ১০ পানীয় এড়িয়ে চলুন এ সম্পর্কিত আলোচনায় এখন আমরা জেনে নিব গর্ভাবস্থায় হুইটগ্রাস জুস খেলে গর্ভবতী মায়ের ও গর্ভের বাচ্চার কি ধরনের ক্ষতি করে সে সম্পর্কে। গর্ভাবস্থায় হুইটগ্রাস জুস পান করা অত্যন্ত কার্যকরী ও উপকারী।
আরও পড়ুন ঃ গর্ভাবস্থায় কামরাঙ্গা খাওয়া নিরাপদ কি না এবং উপকারিতা ও অপকারিতা।
হুইটগ্রাস জুস কাঁচ হুইটগ্রাস থেকে তৈরি করা হয়, ফলে এর মধ্যে জীবাণু থেকে যেতে পারে। এই জীবাণুগুলোই গর্ভবতী মা ও গর্ভের শিশুর জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। হুইটগ্রাস জুস উপকারী হলেও গর্ভাবস্থায় এটি এড়িয়ে চলা উচিত।
৬.অ্যালকোহল গর্ভাবস্থায় ক্ষতি করে
গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মা ও গর্ভে শিশুর ক্ষতি করে এমন ১০ পানীয় এড়িয়ে চলুন এ সম্পর্কিত আলোচনার এ পর্যায়ে আমরা জানাবো গর্ভবতী মা ও গর্ভের শিশুর জন্য মদ বা অ্যালকোহল কি ধরনের ক্ষতি করে সে সম্পর্কে। গর্ভাবস্থায় অ্যালকোহল পান করলে গর্ভবতী মায়েরা নানা রকম জটিলত হয়ে পড়তে পারেন পাশাপাশি গর্ভের বাচ্চারাও বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।
আরও পড়ুন ঃ গর্ভাবস্থায় তেঁতুল খাওয়া নিরাপদ কি না।
গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত মদ বা অ্যালকোহল পান করলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হঠাৎ গর্ভপাতা হয়ে যেতে পারে, বাচ্চার অপর্যাপ্ত ওজন হতে পারে, অপরিনত বা অপরিপূর্ণ বাচ্চা প্রসব হতে পারে, বুদ্ধিমত্তাহীন ও ক্ষুদ্র আকৃতির মাথা বা বিকৃত আকৃতির বাচ্চা প্রসব হতে পারে, এমন কি মৃত্যু বাচ্চাও প্রসব হতে পারে। সেজন্য গর্ভাবস্থায় অ্যালকোহল পান থেকে বিরত থাকা উচিত।
৭.গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মা ও গর্ভে শিশুর ক্ষতি করে ডায়েট সোডা
গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মা ও গর্ভে শিশুর ক্ষতি করে এমন ১০ পানীয় এড়িয়ে চলুন এ সম্পর্কিত আলোচনার এ পর্যায়ে আমরা আলোচনা করব ডায়েট সোডা গর্ভবতী মা ও গর্ভের শিশুর জন্য কি ধরনের ক্ষতি করে সে সম্পর্কে। সুস্থ গর্ভধারণের জন্য এ ধরনের ডায়েট সোডা পান করা থেকে বিরত থাকুন।
আরও পড়ুন ঃ গর্ভাবস্থায় তৃতীয় তিন মাসে করণীয় বর্জনীয় ও নির্দেশিকা।
এই ডায়েট সোডাগুলো এক ধরনের সফট ড্রিংকস হলেও এর মূল উপাদান হলো ক্যাফিন ও অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান। এই ক্যাফিন কি ধরনের ক্ষতি করে তা আমরা আগের আলোচনায় বলেছি। ক্যাফিন সমৃদ্ধ এই পানীয় বেশি পরিমাণে খেলে গর্ভে বাচ্চার বৃদ্ধি কমে যায়, এমন কি এবরশন পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।
৮.গর্ভে শিশুর ক্ষতি করে সফট ড্রিংকস
গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মা ও গর্ভে শিশুর ক্ষতি করে এমন ১০ পানীয় এড়িয়ে চলুন এ সম্পর্কিত আলোচনাও এ পর্যায়ে আমরা আলোচনা করব সফট ড্রিংকস পান করলে গর্ভবতী মায়ের ও গর্ভের শিশুর কি ধরনের ক্ষতি হয় সে সম্পর্কে।
এগুলোর মধ্যেও ক্যাফিন থাকে আবার কোন কোন সফট ড্রিংকস বা কমন পানীয়র সাথে কুইনাইন নামক এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ মেশানো থাকে। এই ক্যাফিন ও কুইনাইন গুলো একসঙ্গে মিশে গর্ভবতী মায়ের জন্য বিপদজনক হতে পারে। সেজন্য এ ধরনের গরম পানীয় পরিহার করা উচিত।
৯.গর্ভে শিশুর ক্ষতি করে গ্রীন টি
গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মা ও গর্ভের শিশুর জন্য ক্ষতিকর এমন পানীয় এড়িয়ে চলুন এ সম্পর্কিত আলোচনায় এখন আমরা আপনাদেরকে জানাবো গ্রীন টি পান করলে গর্ভবতী মা ও গর্ভের বাচ্চার কি ধরনের ক্ষতি হয় সে সম্পর্ক। গ্রীন টিতে ক্যাফিন থাকে, অতিরিক্ত ক্যাফিন গ্রহণের কারণে বাচ্চার বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ অব অবস্টোট্রিশিয়ানস এন্ড গাইনোকোলজিস্টদের মতে, এক কাপ গ্রীন টিতে ২৫ মিলিগ্রাম ক্যাফিন থাকে যা ক্ষতির কারণ নয় কিন্তু এই ক্যাফিনের পরিমাণ যদি ২০০ মিলিগ্রামের বেশি প্রতিদিন একজন গর্ভবতী মা গ্রহণ করেন, তাহলে ক্ষতির কারণ হতে পারে। গর্ভে বাচ্চার সুরক্ষার জন্য গর্ভবতী মাদের অতিরিক্ত গ্রিন টি পান করা এড়িয়ে চলা উচিত।
১০.গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মা ও গর্ভে শিশুর ক্ষতি করে মেয়াদ উত্তীর্ণ জুস বা পানীয়
মেয়াদ উত্তীর্ণ জুস বা পানীয় বা খাবার সর্বদাই এড়িয়ে চলা উচিত। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় একেবারেই খাওয়া উচিত নয়। মেয়াদ উত্তীর্ণ জুস বা খাদ্য-খানা খেলে গর্ভবতী মা ও গর্ভের শিশুর নানান ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। গর্ভবতী মা ও গর্ভের বাচ্চা মেয়াদ উত্তীর্ণ পানীয় বা খাবারের বিষক্রিয়ার কারণে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। সে জন্য শুধু গর্ভাবস্থায় নয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে এগুলো এড়িয়ে চলা উচিত।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক বৃন্দ, একজন গর্ভবতী মায়ের সব সময় চিন্তা-চেতনা থাকে তার গর্ভের সন্তানটা কিভাবে ভালো থাকবে? কিভাবে ভালো রাখা যাবে? সে সম্পর্কে। অনেক মায়েরাই জেনে বা নাজেনেই অনেক পানীয় বা জুস খেয়ে ফেলেন, যেগুলো নবাগত বাচ্চার জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। মনে রাখতে হবে, অসুস্থ বাচ্চা সারা জীবনের কান্না। সেজন্য এই সেনসিটিভ মুহূর্তে সকল ধরনের জুস বা খাবার দেখে, শুনে, বুঝে খাওয়া উচিত। যাতে করে নবাগত বাচ্চাটা সুস্থ, সবল ও ত্রুটিমুক্ত হয়।
আশা করি, গর্ভাবস্থায় কি ধরনের পানীয় বা জুস খাওয়া যাবে না এ সম্পর্কিত আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা নিশ্চয়ই এ বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন ও উপকৃত হয়েছেন। এই আর্টিকেলটি শেয়ার করে দিবেন যেন অন্যান্য গর্ভবতী মায়েরাও এটি পড়ে জানতে পারেন। এ ধরনের আরও আপডেট তথ্য পাওয়ার জন্য চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে আমাদের সাথেই থাকুন। নবাগত বাচ্চা সুন্দর, সুস্থ, সবল ও ত্রুটিমুক্ত হোক এটাই আমাদের কাম্য। আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
aksgreenit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url