শবে বরাতের গুরুত্ব ও ফজিলত এবং করণীয় ও বর্জনীয়
শবে বরাতের গুরুত্ব ও ফজিলত এবং করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলটি লেখা। মুসলিম জাহান তথা ইসলাম ধর্ম অনুসারীদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত হলো শবে বরাত। এটি এক মহিমান্বিত ও পবিত্র রজনী। এই রজনীতে আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিন তার বান্দাদের জন্য বিশেষ রহমত ও ক্ষমা বর্ষণ করে থাকেন। এই রাতে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের গুনাহ মাফ করে দেন।
শবে বরাতের এই রাত্রিতে মুসলমানরা গভীর বিশ্বাসের সহিত ইবাদতে মশগুল থাকেন। প্রতি হিজরী সনের সাবান মাসের ১৫ তারিখ শবে বরাতের রাত্রি হিসেবে পালন করা হয়। আজকের আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা জানতে পারবেন শবে বরাতের গুরুত্ব, শবে বরাতে করণীয়, শবে বরাতে কি কি করা যাবে না, শবেবরাতের ফজিলত ও এরকম আরো অনেক বিষয় সম্পর্কে।
পেজ সুচিপত্র
শবে বরাত কি
শবে বরাতের গুরুত্ব ও ফজিলত এবং করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কিত আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করব শবে বরাত কি বা শবে বরাত কাকে বলে সে সম্পর্কে। শবে বরাত বা মধ্য-শা'বান হিজরী সনের শাবান মাসের ১৪ ও ১৫ তারিখের মধ্যবর্তী রাতকে বুঝানো হয়। অর্থাৎ ১৪ তারিখ দিবাগত রাত যা ১৫ তারিখ দিন শুরুর রাতকেই শবে বরাত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। হাদিসের ব্যাখ্যা অনুসারে এই পবিত্র রাতে আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে বিশেষভাবে ক্ষমা করেন।
শবে বরাতের শাব্দিক অর্থ বা মানে
শবে বরাতের গুরুত্ব ও ফজিলত এবং করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কিত আলোচনাটির এ পর্যায়ে আমরা জেনে নেব শবে বরাত শব্দের অর্থ কি বা শবে বরাত শব্দের মানে কি সে সম্পর্কে। শবে বরাত দুইটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। একটি শব্দ হলো 'শব' অন্য শব্দটি হলো 'বরাত'।
ফারসি ভাষায় শব শব্দের অর্থ রাত আর বরাত শব্দের অর্থ হলো সৌভাগ্য বা নাজাত বা মুক্তি। আরবি ভাষায় একে বলে 'লাইলাতুন বরাত' অর্থাৎ সৌভাগ্যের বা মুক্তির রাত। হাদিসের ব্যাখ্যা অনুযায়ী আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন এই রাতে তাঁর বান্দাদেরকে গুনাহ বা অপরাধ মার্জনা বা মাফ বা ক্ষমা করে দেন। জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন।
আরও পড়ুন ঃ মহররমের তাৎপর্য ও আশুরার মাহাত্ম্য এবং ১০ মহররমের ২০ ঘটনা।
শাবান মাসের ১৫তম রাতকে বা শবে বরাতের রাতেকে বিভিন্ন দেশ বা অঞ্চল ভেদে বিভিন্ন নামে নামকরণ করা হয়েছে, যার মূল অর্থ একই, সেই নামগুলো নিম্নরূপ -
- শবে বরাত (ফার্সি ভাষা),
- মধ্য শাবান বা অর্ধ শাবান (ইসলামী দিনপঞ্জির শাবান মাসে দিনটির অবস্থান অনুসারে নামকরণ)
- লাইলাতুন নিসফে মিন শাবান (আরবি ভাষা),
- নিসফু শা'বান (মালায় ভাষা),
- নিম শা'বান (ইরান ও আফগানিস্তান),
- বিরাত কান্দিলি (তুর্কি ভাষা),
- শবে বরাত বা নিসফু শাবান (ভারতীয় উপমহাদেশে)। ইত্যাদি।
বিভিন্ন দেশে যে নামেই শবে বরাত প্রচলিত থাকুক না কেন। সব মুসলিমদের একই উদ্দেশ্য, এই রাতে আল্লাহর কাছে মাথানত করে ইবাদত-বন্দেগী করা, স্বীয় কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাওয়া ও ভালো উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করা।
২০২৫ সালে শবে বরাত কবে
শবে বরাতের গুরুত্ব ও ফজিলত এবং করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কিত আলোচনার এ পর্যায়ে আমরা আপনাদেরকে জানিয়ে দেবো ২০২৫ সালে শবে বরাত ইংরেজি কোন মাসের কত তারিখে সে সম্পর্কে।
আরবি বর্ষপঞ্জি অনুসারে মধ্য-শাবানের তারিখ প্রতিবছর একই থাকে। কিন্তু ইংরেজি সালে এই তারিখ আগের বছরের তুলনায় ১১ দিন এগিয়ে আসে। চাঁদ দেখা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক পবিত্র শবে বরাতের ইংরেজি তারিখটি হল ১৪ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সাল।
যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয়-ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে প্রত্যেকটি মুসলমান এই দিনটি পালন করে নিজের গুনাহ থেকে মুক্তি লাভ করবেন বলে আমি আশা করি। পরম করুনাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ যেন সবাইকে মাফ করে দেন। আমিন।
আরও পড়ুন ঃ জেনে নিন ২০২৫ সালে ঈদ মহরমসহ সকল ইসলামিক উৎসবের দিন তারিখ
কোরান হাদিসের আলোকে শবে বরাতের গুরুত্ব
শবে বরাতের গুরুত্ব ও ফজিলত এবং করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কিত আলোচনার এ পর্যায়ে আমরা আলোচনা করব হাদিসের আলোকে শবে বরাতের গুরুত্ব সম্পর্কে। বিভিন্ন হাদিসে এ রাতের গুরুত্ব সম্পর্কে বিশেষভাবে উল্লেখ রয়েছে।
হাদিসের ব্যাখ্যা থেকে এসে হযরত আবু বকর (রা:) ব্যাখ্যা করেন হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর এক হাদিসে তিনি বলেন এই শবে বরাতের রাতে আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন পৃথিবীর আকাশে নেমে আসেন এবং মানুষকে তাঁর কাছে রোগমুক্তি, জাহান্নাম থেকে মুক্তি, রিজিক ও ক্ষমা ইত্যাদি বৈধ সবকিছু প্রার্থনা বা চাওয়ার জন্য আহ্বান করতে থাকেন।
অন্য একটা হাদিসের ব্যাখ্যায় এসেছে হযরত আবু বকর (রা:) বলেন নবী করিম (সা:) ইরশাদ করেন - পরম করুনাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ তায়ালা শবে বরাতে আসমানে নেমে আসেন এবং কাফের, মুশরিক ও হিংসুকদের ছাড়া সকলকে ক্ষমা করেন।
অন্য একটা হাদিসের ব্যাখ্যায় এসেছে এই সমস্ত লোকগুলো যদি খালেছ দিলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান এবং পরবর্তীতে এই কাজগুলো (শিরেকি, কুফরি ও হিংসা) আর করবেন না এই মর্মে ওয়াদাবদ্ধ হন তাহলে আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন তাদেরকেও ক্ষমা করে দেন।
হাদিসের ব্যাখ্যা এসেছে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এরশাদ করেন সাবান রাতে এবাদত করো এবং দিনে রোজা রাখুন।
হযরত আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন নবী করিম (সা:) এরশাদ করেন ১৫ সাবান আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর আকাশে নেমে আসেন এবং বনু-কাল্ব গোত্রের মেষের পশমের চেয়ে বেশি মানুষকে ক্ষমা করেন।
শবে বরাতের ফজিলত
শবে বরাতের গুরুত্ব ও ফজিলত এবং করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কিত আলোচনার এ পর্যায়ে আমরা জেনে নেব শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে। শবে বরাতের এই পবিত্র রাতে পরম করুনাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেন।
আরও পড়ুন ঃ অর্থসহ ছেলে শিশুর ইসলামিক নামের তালিকা ও ইংরেজী বনান (১৫০০+)।
শবে বরাতের রাতে ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার কাছে নিজের কৃতকর্মের জন্য ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়া হয়। আল্লাহপাক তার বান্দাদেরকে ক্ষমা করতে পছন্দ করেন এবং বান্দার উপর রহমত বর্ষণ করেন।
আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা চাওয়া হয় এই মর্মে যে, হে আল্লাহ, আপনি পরিপূর্ণ ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন।
আলেমদের মতে এই রাতে ইবাদতের ফজিলত ও গুরুত্ব সম্পর্কে কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই। পবিত্র শবে বরাতের রাত এমন একটি মহিমান্বিত রাত যে রাতে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের প্রতি বিশেষ দয়া প্রদর্শন করেন এবং তাদের তওবা ও দোয়া কবুল করেন।
শবে বরাতে করণীয়
শবে বরাতের গুরুত্ব ও ফজিলত এবং করণীয় ও বর্জনীয় আলোচনায় এখন আমরা আলোচনা করব শবে বরাতে করণীয় সম্পর্কে। শবে বরাতের এই মহিমান্বিত পবিত্র রাতে আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন নিম্ন আসমানে নেমে আসেন এবং প্রত্যক্ষ করেন যে, কোন বান্দা তাঁর (আল্লাহর) কাছে কি চায় সে সম্পর্কে।
আল্লাহ পাক এই রাতে বান্দাদেরকে ক্ষমা করার জন্য নিম্ন আসমানে নেমে আসেন। এই পবিত্র ও বরকতময় রাতে নিম্নোক্ত কাজগুলো মুসলিম উম্মার বেশি বেশি করা উচিত।
আরও পড়ুন ঃ অর্থসহ মেয়ে বাচ্চাদের ইসলামিক নামের তালিকা ও ইংরেজি বানান (১০০০ প্লাস)।
- এই রাতে বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করা।
- বেশি বেশি কাজা নামাজ আদায় করা।
- বেশি বেশি নফল ইবাদত করা।
- আল্লাহর কাছে তওবা করা।
- আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার করা।
- কোরআন তেলাওয়াত করা।
- নেক বিষয়ে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি চাওয়া।
- বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করা।
- অনানুষ্ঠানিকভাবে কবর জিয়ারত করা।
- এই পবিত্র রাতে মুসলমানদের মৃত পূর্বপুরুষদের জন্য ক্ষমা চাওয়া।
- অতীতের ভুলের জন্য ক্ষমা চাওয়া।
- ভবিষ্যতে ভালো থাকার জন্য প্রার্থনা করা।
- দিনের বেলা রোজা রাখা।
- গোপনে গোপনে দান-খয়রাত করা। ইত্যাদি।
শবে বরাতে বর্জনীয়
শবে বরাতের গুরুত্ব ও ফজিলত এবং করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কিত আলোচনার এ পর্যায়ে আমরা আলোচনা করব শবে বরাতে কি কি কাজ করা উচিত নয় বা কি কি বর্জন করা উচিত সে সম্পর্কে।
রাসুল (সা:) নিজের জীবনে এ রাত বারবার পেয়েছেন। আল্লাহর সানিধ্য পাওয়ার জন্য ইবাদত ও আমল করেছেন। এই রাতে কি আমল করতে হবে এবং কি ভাবে আমল করতে হবে সেগুলো সাহাবায়ে কেরামের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করে আমাদেরকে শিখিয়ে গেছেন।
তারপরে সেই অনুসারে সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, তাবে তাবেঈন এবং উলামা ও মাশায়েখ কেরম এ রাতে এবাদত করে গেছেন। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর রেখে যাওয়া আদর্শই আমাদের হুবহু অনুসরণ ও অনুকরণ করতে হবে।
নিজের ইচ্ছাকৃতভাবে কোন কিছু বাড়ানো বা কমানোর কোনো সুযোগ নেই। তাঁর আদর্শের বাহিরে কোন কিছু বাস্তবায়ন করা বর্জন করতে হবে। শবে বরাতে বর্জনীয় কিছু কাজ নিম্নে আলোচনা কর হলো।
আরও পড়ুন ঃ ম দিয়ে মেয়েদের ইসলামিক নাম অর্থসহ ও ইংরেজি বানান (আপডেট ২০২৫)।
- হালুয়া-রুটির ব্যবস্থা না করা।
- আতশবাজি করা যাবে না।
- আলোকসজ্জা করা যাবে না।
- হট্টগোল করা যাবে না।
- হৈ চৈ বা শোরগোল করা যাবে না।
- সকল ধরনের পাপ কাজ বর্জন করা।
অনেকে এ রাতে হালুয়া রুটির ব্যবস্থা করেন যা মোটেও উচিত নয়। এগুলো করতে গিয়ে মূল এবাদত করতে পারেন না ফলে সাওয়াব বা নেকি থেকে অনেকেই বঞ্চিত হন। হাদিস, ইজমা ও কিয়াসে এর কোন অস্তিত্ব নেই। কাজেই এগুলো এ রাতে বর্জন করা উচিত।
এই মহিমান্বিত ও পবিত্র রাতে অনেকে আতশবাজী, আলোকসজ্জা ও হট্টগোল নিয়ে ব্যস্ত থাকেন যা চরম বিদাত, কুসংস্কার, গুনাহের কাজ ও হারাম। এই রাত আল্লাহ প্রদত্ত নেকি বা সওয়াব কামানোর রাত।
এ রাতে এগুলো করা কোন অবস্থাতেই বাঞ্ছনীয় নয়। এগুলো করতে গিয়ে অনেক অপচয় হয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাকের ঘোষণা হল তোমরা অপচয় করোনা। অপচয় করা আল্লাহ পছন্দ করেন না।
সিয়াম সাধনা বা রমজানের প্রস্তুতি
শবে বরাতের গুরুত্ব ও ফজিলত এবং করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কিত আলোচনার এ পর্যায়ে আমরা আলোচনা করব শবে বরাত কিভাবে মুসলমানদের অন্তরে সিয়াম সাধনা বা রমজানের প্রস্তুতি নিতে শিখায় সে সম্পর্কে।
পবিত্র শবে বরাত পালনের মাধ্যমে মুসলমানদের অন্তরে এ কথা অনুভূত হয় যে সামনে রমজান মাস বা সিয়াম সাধনার মাসর আগমনী বার্তা। কারণ হিজরী ক্যালেন্ডার অনুসারে শাবান মাসের পরেই রমজান মাস। সে জন্য এই শবে বরাতের রাত পালনের মাধ্যমে সবার অন্তরে রমজানের প্রস্তুতি সম্পর্কে অনুভূত হয়।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক বৃন্দ, শবে বরাতের রাত ইসলাম ধর্ম অনুসারীদের তথা মুসলিম উম্মার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত। এই রজনীতে বিভিন্ন ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে থেকে রহমত ও মাগফিরাত পাওয়া যায়। আমাদের সকলের উচিত এই রাতে এবাদত বন্দেগির মাধ্যমে আল্লাহর কাছে রহমত ও ক্ষমা চাওয়া।
আশা করি, পবিত্র শবে বরাত সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের ভালো লেগেছে ও শবে বরাত সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়ে জানতে পেরেছেন। আর্টিকেলটি সম্পর্কে কোন মতামত থাকলে কমেন্ট বক্সে জানানোর অনুরোধ রইল। এ রকম আরো আপডেট তথ্য পাওয়ার জন্য চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে আমাদের সাথেই থাকুন। আর্টিকেলটি কষ্ট করে পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
তথ্য সংগৃহীত
aksgreenit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url